জমি রেজিস্ট্রি খরচ ক্যালকুলেটর ও জমি রেজিস্ট্রি করার নিয়ম সম্পর্কে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।জমি জায়গা আমাদের জীবনের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ।
বিভিন্ন কারণে আমাদের জমি রেজিস্ট্রি করার প্রয়োজন হয়। জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য আপনাকে বেশ কিছু বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হবে। অন্যথায় আপনি জমি রেজিস্ট্রি করার সময় নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে পারেন।
আপনারা অনেকেই অবগত আছেন যে বাংলাদেশের পেক্ষাপটে জমি ক্রয় বিক্রয়, জমি রেজিস্ট্রি, দলিল ইত্যাদি সম্পর্কিত জটিলতার কারনে অনেক মামলা মোকদ্দমা হয়ে থাকে। এতে ভুক্তভোগীর অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়ে থাকে।
আর তাই সকল প্রকার ঝামেলা এবং ঝুঁকি এড়াতে জমি ক্রয় বা বিক্রয় করার আগে সকল কাগজ পত্র ঠিক করে রাখতে হবে। আর এ জন্য আমাদেরকে জমি রেজিস্ট্রি করার নিয়ম ও জমি রেজিস্ট্রি খরচ ক্যালকুলেটর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
এই আর্টিকেলে জমি রেজিস্ট্রি করার নিয়ম ও জমি রেজিস্ট্রি খরচ ক্যালকুলেটর সম্পর্কে বিশদ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে যা আপনাকে অনেক সাহায্য করবে।
জমি রেজিস্ট্রি কি ?
কোন জমি ক্রয় কারা হলে বা দান গ্রহন, জমি বন্ঠন বা অন্য কোন কারণে জমির মালিকানা পরিবর্তন হলে পুরাতন মালিক হতে নতুন মালিকের নামে একটি দলিল তৈরি করা হয়।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এই দলিল স্থানীয় ভূমি সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বাংলাদেশ সরকারের মনোনীত কর্মকর্তা কর্তৃক একটি নিদিষ্ট পরিমাণ ফি প্রদান করে রেজিষ্ট্রেশন এর জন্য আবেদন করতে হবে।
মূলত এই প্রক্রিয়া কেই আমরা জমি রেজিস্ট্রি করা বলে থাকি।
জমি রেজিস্ট্রি করতে কি কি কাগজ লাগে বা জমি রেজিস্ট্রি করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র?
জমি রেজিস্ট্রি করতে সংশ্লিষ্ট জমির বেশ কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। এ সকল বিষয়ে আমাদের জানাটা অনেক জরুরী।
এ পর্যায়ে আলোচনা করা হচ্ছে জমি রেজিস্ট্রি করতে কি কি কাগজ লাগে সে সম্পর্কে।
- রেজিস্ট্রিকৃত জমির সিএস অথবা এসএ অথবা আরএস অথবা বিএস/বিআরএস অথবা নামজারি খতিয়ানের মূল কপি প্রয়োজন।
- সর্বশেষ বছরের ভূমি উন্নয়ন কর ব খাজনা পরিশোধের রশিদ (দাখিলা)। যা আপনি ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে পাবেন।
- জমি ক্রেতা এবং বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা পাসপোর্ট এর কপি ।
- উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমি রেজিস্ট্রি করার ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার গনের উত্তরাধিকার/ওয়ারিশ সনদ পত্র যা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কতৃক প্রদানকৃত হতে হবে।
- জমি ক্রেতা এবং বিক্রেতার সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
- ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড ,সিটি কর্পোরেশনএবং জেলা সদরের পৌরসভার অধীন ১ লক্ষ টাকার বেশি মূল্যের জমি রেজিস্ট্রি করার ক্ষেত্রে দলিলের ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ের Electronc Taxpayer’s Identification Number বা E-TIN নাম্বার প্রয়োজন।
- রেজিস্ট্রি কৃত জমির প্রয়োজনীয় বায়া বা পিঠ দলিল সমূহের মূল কপি অথবা সার্টিফাইড কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
জমি রেজিস্ট্রি করার নতুন নিয়ম সম্পর্কে জানুন।
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সাল থেকে সমস্ত প্রকার হস্থান্তর যোগ্য দলিল রেজিষ্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক করেছে।
যদি আপনার কোন দলিল রেজিষ্ট্রেশন না করা হয়ে থাকে তাহলে তার আইনানুগ ভাবে কোন বৈধতা থাকবে না।আমরা অনেকে জমি রেজিস্ট্রি করার নিয়ম সম্পর্কে জানি না।
এখন এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে।জমি রেজিস্ট্রি করতে হলে আপনাকে উপরে উল্লেখিত সকল দলিল দস্তাবেজ সঠিকভাবে সংগ্রহ করে ক্রেতা, বিক্রেতা এবং কয়েকজন সাক্ষী সহ উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে হবে।
আপনি যদি জমি ক্রয়ের জন্য বায়নানামা করে থাকেন তাহলে বায়না পত্র তৈরির ১ মাসের মধ্যে বায়নাপত্র উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। আপনি যদি বায়নাপত্র রেজিষ্ট্রেশন না করেন তা হলে কোন প্রয়োজনে আইনি সহায়তা পাবেন না।
আবার বায়নাপত্র তৈরির ৩ মাসের মধ্যে উক্ত জমি রেজিস্ট্রি করতে হবে তবে বিশেষ কোন কারনে উক্ত জমি রেজিস্ট্রি করতে না পারলে উপযুক্ত কারন দেখিয়ে জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে আপিল করার সুযোগ আছে। জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে আপিল করতে পারবেন ।
জমি রেজিস্ট্রি করতে যে দলিল প্রস্তুত করা হয় তাকে মুলত সাব কবলা দলিল বলা হয়। এই সাব কবলা দলিল যেকোনো একজন মুহুরি বা দলিল লেখক কতৃক লিখতে হবে।
উল্লেখ্য জমি রেজিস্ট্রি করার নতুন নিয়ম অনুযায়ী একটি জমির মোট দলিল হবে তিন টি। তবে মুহুরি কতৃক দলিল লিখতে আপনা একটি নিদিষ্ট পরিমান ফি প্রদান করতে হবে।
দলিল লেখার সকল নিয়ম কানুন মেনে দলিল লেখা শেষ হলে উক্ত দলিল রেজিষ্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা হবে। জমি ক্রয় মুল্য হিসাবে রেজিষ্ট্রেশন ফি নিদ্ধারন করা হয়ে থাকে।
দলিল রেজিষ্ট্রেশন আবেদন এর কিছু দিন পরে উক্ত জমির নতুন দলিলের সার্টিফাইড কপি বা দলিলের নকল তুলতে আবেদন করতে হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে দলিল তল্লাশি এই পোস্ট টি পড়তে পারেন।
বর্তমানে জমি রেজিস্ট্রি খরচ কত বা জমি রেজিস্ট্রি করার খরচ কত?
জমি রেজিস্ট্রি খরচ নির্ভর করে কি ধরণের জমির দলিল প্রস্তুত করা হচ্ছে তার উপর। তবে কিছু কিছু খরচ বাদে অন্যান্ন খরচ প্রায় একই হয়ে থাকে।
নিম্নে বর্তমানে জমি রেজিস্ট্রি খরচ কত বা জমি রেজিস্ট্রি করার খরচ কত তা আলোচনা করা হলো।
- সাফ কুবলা দলিলের ক্ষেত্রে স্ট্যাম্প শুল্ক ১.৫% তবে সর্বচ্চো ২ কোটি টাকা এবং হলফনামা স্ট্যাম্প শুল্ক ৩০০ টাকা
- রেজিষ্ট্রেশন ফি – এ ফি ১% তবে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা, এন ফি ৩০০ শব্দ বিশিষ্ট প্রতি পাতা ২৪ টাকা।
- স্থানীয় সরকার কর – ইউনিয়ন/উপজেলা/জেলা/ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এর ক্ষেত্রে ৩% এবং সিটি কর্পোরেশন এর জন্য ২%।
- মূল্য সংযোজন কর- প্লটের ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের ২% , স্থাপনা/ফ্লাট/বিল্ডিং এর ক্ষেত্রে ১৬০০ বর্গ ফুটের নিচে ২% এবং ১৬০০ বর্গ ফুটের উদ্ধে ৪.৫% ( শুধু মাত্র ডেভোলপার এর জন্য )
- বিবিধ ফিস- এন এন ফি প্রতি ৩০০ শব্দ বিশিষ্ট পৃষ্টা প্রতি ৩৬ টাকা এবং কোর্ট ফি ১০ টাকা।
- অগ্রক্রয় প্রযোজ্য হলে প্রতি শরিকের নোটিশের জন্য কোর্ট ফি ৫ টাকা।
- উৎসে কর এবং উৎসে আয়কর এর ক্ষেত্রে আয়কর আইন ২০২৩ এর ধারা যথাক্রমে ১২৫ এবং ১২৬ অনুযায়ী ধার্য করা হবে। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে দলিল রেজিষ্ট্রেশন ফি এই লিংকে ভিজিট করুন
ভূমি রেজিস্ট্রেশন অনলাইন সম্পর্কে জানুন।
ভূমি রেজিস্ট্রেশন অনলাইন এর মাধ্যমে করতে ভূমি প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এই লিংকে ভজিট করে অভ্যন্তরীণ ই-সেবাসমূহ অপশন থেকে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন এই লিংকে ভিজিট করুন। এখান থেকে ড্যসবোর্ড থেকে Apply online now অপশনে ক্লিক করুন। এখানে একটি ফরম পাবেন। যা পুরুন করে আপনি অনলাইনে ভূমি রেজিস্ট্রেশন আবেদন করতে পারবেন।
জমি রেজিস্ট্রি খরচ ক্যালকুলেটর বা দলিল রেজিস্ট্রেশন ফি ক্যালকুলেটর
গুগল প্লে স্টোর এ আপনি জমি রেজিস্ট্রি খরচ ক্যালকুলেটর লিখে সার্স দিলে দলিল ফিস ক্যালকুলেটর নামে একটি App দেখতে পাবেন।
এই app দিয়ে আপনি খুব সহজে দলিল রেজিষ্ট্রেশন খরচ এর হিসেব করতে পারবেন।
জমি রেজিস্ট্রি করার কত দিন পর দলিল পাওয়া যায় ?
মুলত জমি রেজিস্ট্রি করার পর দলিল পেতে এক এক অফিসে এক এক রকম সময় লাগে। তবে আপনাকে অফিস থেকে জানতে হবে কত সালের দলিল প্রদান করা হচ্ছে।
যখন আপনার জমি রেজিস্ট্রি করার সালের দলিল প্রদান করা হবে তখন আপনি আপনার জমির রশিদ বা খতিয়ান এর সাহায্যে মুল দলিলের জন্য আবেদন করবেন।
জমি রেজিস্ট্রি করতে কতদিন সময় লাগে?
জমি রেজিস্ট্রি করার আবেদন করার জন্য দলিল প্রস্তুত করে ভূমি রেজিস্টার অফিসে জমা দিলে ১ মাসের মধ্যে জমি রেজিস্ট্রি হয়ে যাবে তবে নতুন দলিল বের হতে বেশ কিছু দিন সময় লাগে। কোন কোন ক্ষেত্রে ২-৩ বছর লেগে যেতে পারে।
শেষ কথা
এতক্ষণ আলোচনা করা হয়েছে জমি রেজিস্ট্রি করার নিয়ম ও জমি রেজিস্ট্রি খরচ ক্যালকুলেটর সম্পর্কে। আশা করি সকলেই খুব ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছেন। এ বিষয়ে কোন কিছু জানতে চাইলে কমেন্টস এর মাধ্যমে জানাবেন,ধন্যবাদ।