অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি ও জমি খারিজ করতে কি লাগে তা জনা আমাদের অনেক জরুরী। জমি আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। আমদের জীবনে অনেক স্বপ্ন থাকে, তার মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি স্বপ্ন হলো নিজের জমি ও ঘর।
আপনি জমির মালিক হন ক্রয়সূত্রে অথবা উত্তরাধিকার সূত্রে। আপনি যে ভাবেই জমির মালিক হন না কেন জমি জায়গা সংক্রান্ত বেসিক কিছু বিষয়ে আপনার জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। জমি জায়গা সংক্রান্ত বেসিক কিছু বিষয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল নামজারি খতিয়ান অনলাইন বা নামজারি আবেদন চেক করা ।
আমরা ইতিমধ্যে অনেকে জানি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে অনেক কিছুই সহজতর করার চেষ্টা করেছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যের একটি অন্যতম ধাপ হলো ভূমি সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা।
বর্তমানে জমি জায়গার সংক্রান্ত অনেক সুযোগ-সুবিধা অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। যেমন জমির বিভিন্ন প্রকার খতিয়ান, জমির ম্যাপ, জমির খাজনা ইত্যাদি অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।
এই সকল সুযোগ-সুবিধার মধ্যে অন্যতম হলো নামজারি খতিয়ান অনলাইন বা নামজারি আবেদন চেক। নিম্নে এ সংক্রান্ত বিশদভাবে আলোচনা করা হলো
অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমি আপনাদের সাথে এখন আলোচনা করতে যাচ্ছি অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি ও জমি খারিজ করতে কি লাগে ?
আমরা অনেকেই জানিনা যে জমি খারিজ বা নামজারি একই অর্থ বহন করে। আপনি জমি খারিজ বা জমির নামজারি আবেদন করা যাই বলেন না কেন দুটোরই ধারাবাহিকতা একই।
নিম্নে নামজারি খতিয়ান অনলাইন বা অনলাইনে জমির খারিজ করার পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
সবার প্রথমে আপনি আপনার মোবাইল অথবা কম্পিউটার দ্বারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত মিউটেশন এ ভিজিট করুন। তারপর আপনি এমন একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন।
উক্ত ওয়েবসাইটের মাঝ বরাবর স্লাইডারে পাঁচটি ধাপের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। আপনাকে নামজারি খতিয়ান অনলাইন বা অনলাইনে জমি খারিজ করার জন্য উল্লেখিত পাঁচটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। ধাপগুলো হল-
১। প্রথম ধাপে নামজারি আবেদন ফরম পূরণ ও আবেদন ফী পরিশোধ।
২। দ্বিতীয় ধাপে ভূমি অফিসের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করা।
৩। তৃতীয় ধাপে আপনার আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্ধারিত ভূমি অফিসে আবেদন শুনানিতে অংশগ্রহণ করা ।
৪। চতুর্থ ধাপে ভূমি অফিসের আবেদন শুনানিতে আপনার আবেদন গ্রহণ করা হলে নির্ধারিত ফী পরিশোধ করা ।
৫। এবং পঞ্চম ধাপে আপনি নামজারি খতিয়ান অনলাইন এর মাধ্যমে ডাউনলোড করতে পারবেন।
এখন উপরের যে অপশন গুলো দেখতে পাচ্ছেন সেগুলোর মধ্যে থেকে প্রথমবার আবেদন করতে হলে নামজারি আবেদন অপশনে ক্লিক করুন। আপনি একটি নামজারি আবেদন ফরম দেখতে পাবেন।
নামজারি আবেদন করার নিয়ম
এ পর্যায়ে আমি অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি ও জমি খারিজ করতে কি লাগে আলচনার অংশ হিসাবে নামজারি আবেদন ফরম বা জমি খারিজ ফরম এ আপনাকে যে সকল তথ্য প্রদান করতে হবে তা সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু কথা আলোকপাত করা হলো। নামজারি আবেদন করার নিয়ম কে আপনি অনলাইনে জমি খারিজের আবেদন হিসাবে অবিহিত করতে পারেন ।
১ । জমির মালিকানা সূত্র – এখানে কিভাবে আপনি জমির মালিক হলেন সে বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে।
২। ক্রেতা/বাদী/গ্রহীতার তথ্য – এখানে আপনি যার থেকে জমি ক্রয় করবেন তার সম্পর্কে তথ্য যাওয়া হয়েছে যেমন বিক্রেতা যদি একক কোন ব্যক্তি হয় তাহলে এটা হবে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি আর যদি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করেন তাহলে সেটা হবে প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানাধীন জমি।
আপনি যদি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি সিলেক্ট করেন তাহলে আপনাকে বিক্রেতার বয়স ১৮ বছর এর উপরে এই অপশনটি চেক মার্ক করে দিতে হবে।
পরের অপশনে আপনাকে আবেদনকারীর তথ্য দিতে হবে। যেমন গ্রহীতা নিজে আবেদন করলে সিলেক্ট করতে হবে গ্রহীতা। আর যদি আবেদনকারী কোন মালিকের পক্ষ থেকে আবেদন করেন তাহলে সিলেক্ট করতে হবে প্রতিনিধি।
আপনি যদি গ্রহীতা সিলেক্ট করেন তাহলে পরের অবসানে আপনাকে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর, জন্ম তারিখ,মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল আইডি দিতে হবে।
আর যদি প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানাধীন জমি সিলেক্ট করেন তাহলে প্রতিষ্ঠানের ধরন অপশনে আপনাকে নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানের ধরন সম্পর্কে উল্লেখ করতে হবে।
৩। মৌজা – এই অপশনে আপনাকে আপনার ক্রয় কৃত জমির সঠিক মৌজা সিলেক্ট করতে হবে । সেক্ষেত্রে বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং মৌজা সঠিকভাবে দিতে হবে।
৪। আবেদন সংক্রান্ত ঘোষণা- এই অপশনে আপনাকে কয়েকটি তথ্য দিতে হবে। আপনি খুব সতর্কতার সাথে এই তথ্যগুলো প্রদান করুন।
উপরের সকল তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করার পরে আপনাকে উক্ত ফরমের একেবারে নিচে ডান দিকে পরবর্তী বাটনটিতে ক্লিক করতে হবে।পরবর্তী বাটনটিতে ক্লিক করার পরে এরকম একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন।
এখানে আপনার প্রদত্ত মোবাইল নম্বরে একটি ওটিপি মেসেজ প্রবেশ করবে। পরবর্তী পেজে আপনাকে ওটিপি নম্বর দিয়ে ভেরিফিকেশন করতে হবে। আপনার ভেরিফিকেশন সঠিক হলে জাতীয় পরিচয় পত্র যাচাই সম্পন্ন হবে।
এরপর আপনি পরবর্তী বাটনটিতে ক্লিক করুন। তাহলে আপনাকে এমন একটি ইন্টারফেস এ নিয়ে যাওয়া হবে।
এখানে আপনাকে আপনার জমির তফসিল অনুযায়ী সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। যেমন
১। খতিয়ানের ধরন-এখানে আপনার জমির যে খতিয়ান রয়েছে সেটি কি ধরনের তা উল্লেখ করতে হবে যেমন আরএস, সি এস ইত্যাদি।
২। খতিয়ান নম্বর – আপনার খতিয়ানের নম্বরটি সঠিকভাবে বসাতে হবে।
৩। দাগ নং – এখানে তফসিলে প্রদত্ত দাগ নম্বরটি সঠিকভাবে বসাতে হবে। আপনার জমি যদি একাধিক দাগের হয় সেটা ও উল্লেখ করতে হবে ।
৪। জমির মাপক ও পরিমাণ – এখানে আপনার জমির পরিমাণ উল্লেখ করবেন এবং সেটি কি হিসাবে যেমন একর হলে একর শতাংশ হিসেবে শতাংশ ইত্যাদি।
৫। দলিল নং, দলিলের তারিখ, জেলা, সাব রেজিস্ট্রি অফিসের নাম এগুলো আপনার জমির দাগ নম্বর অনুযায়ী পূরণ করতে হবে।
৬। আপনার যদি একাধিক দলিল থাকে তাহলে আপনি চাইলে আরো দলিল সংযুক্ত করুন বাটনটিতে ক্লিক করে আরো দলিলের তথ্য সংযুক্ত করতে পারেন।
৭। এবং আপনার যদি একাধিক দাগ নম্বর এর জমি থাকে তাহলে আরো দাগ নম্বর সংযুক্ত করুন বাটনটিতে ক্লিক করে দাগ নম্বর সংযুক্ত করতে পারেন।
আপনার প্রদত্ত তথ্যগুলো সঠিক হলে পরবর্তী বাটনটিতে ক্লিক করুন। এখন আপনি পরবর্তীতে পেইজে দাতার তথ্য, গ্রহিতা তথ্য এবং আপনি যদি প্রতিনিধির তথ্য দিয়ে থাকেন তাহলে প্রতিনিধির তথ্য দেখতে পাবেন। এরপর পরবর্তী বাটনটিতে ক্লিক করুন।
পরবর্তী ধাপে আপনাকে এমন একটি পেজে নিয়ে যাওয়া হবে যেখানে দাতার তথ্য চাওয়া হবে। এখানে আপনি দাতার তথ্য প্রদান করুন বাটনটিতে ক্লিক করুন। ক্লিক করার পরে এমন একটি পেজ দেখতে পাবেন।
এই পেজে দাতার সম্পর্কে যে সকল তথ্য যাওয়া হয়েছে সেগুলো আপনাকে প্রদান করতে হবে। তবে যে সকল তথ্যের পাশে স্টার মার্ক দেওয়া আছে সেগুলো অবশ্যই আপনাকে প্রদান করতে হবে।
এরপর পরবর্তী ধাপে আপনাকে স্ক্যান করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে তবে মনে রাখবেন প্রতিটি স্ক্যান ফাইল এর সাইজ ১.৫ এমবি এর বেশি যাতে না হয় এবং অবশ্যই স্ক্যান কপিটি পিডিএফ ফরমেটে সংযুক্ত করতে হবে। এভাবে আপনি সর্বোচ্চ ২৫ এমবি পর্যন্ত সংযুক্ত করতে পারবেন।
এ ছাড়াও আপনি দেখতে পারেন কিভাবে নামজারি আবেদন চেক বা অনলাইন খারিজ চেক করবেন
আপনি চাইলে এই আবেদন টি সাবমিট না করে খসড়া হিসাবে রাখতে পারেন । সে জন্য আপনাকে খসড়া সংরক্ষন করুন বাটন টি তে ক্লিক করুন । তারপর আপনার মোবাইল নাম্বারে একটি ওটিপি যাবে যেখানে ট্র্যাকিং নম্বর দেওয়া হবে। এই ট্রাকিং নম্বর এবং মোবাইল নম্বর দিয়ে আপনি মিউটেশন এই ওয়েবসাইটের হোমপেজে খসড়া আবেদন অপশনটিতে ক্লিক করলে আপনার পূরণ কৃত ফর্ম টি পুনরায় ফিরে পাবেন। এবং পরবর্তীতে সাবমিট করতে পারবেন।
এরপর আপনাকে নিচের দিকে একটি চেক বক্স কে পড়ে চেক করে দিতে । এখন আপনি আপনার প্রধানকৃত তথ্যসমূহ ভালোভাবে চেক দিয়ে আবেদন দাখিল করুন বাটনে ক্লিক করুন।
পরবর্তী পেইজে আপনাকে পেমেন্টের অপশন দেওয়া হবে। পেমেন্ট অপশনে যে সকল মোবাইল ব্যাংকিং সেবা যোগ করা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি দিয়ে প্রেমেন্ট করতে পারবেন।
প্রেমেন্ট করার সাথেই শেষ হলো নামজারীর খতিয়ান অনলাইন বা নামজারি আবেদন অথবা অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি যাই বলেন না কেন সেটির কার্যক্রম সম্পূর্ণ করা হয়েছে।
মিউটেশন করতে কি কি কাগজ লাগে
১। মূল দলিলের স্ক্যান কপি ( অবশ্যই দিতে হবে )
২। সর্বশেষ খতিয়ানের স্ক্যান কপি ( অবশ্যই দিতে হবে )
৩। জমির চৌহদ্দিসহ হাত নকশা ।
৪। খাজনার দাখিলা (রশিদ)
৫। ওয়ারিশ সনদ(উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হলে)
৬।আদালতের ডিক্রি বা আদেশ নামা (যদি থাকে)
৭। পাসপোর্ট সাইজের ছবি, NID, নামজারির আবেদনপত্র
জমির নামজারি করার নিয়ম কি ?
অনলাইনে জমির নামজারি করার নিয়ম অনেক সহজ। এর জন্য পরথমে আপনাকে এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হবে। উক্ত পেজে আপনি যে অপশন গুলো দেখতে পাবেন তা থেকে নামজারি আবেদন অপশন এ ক্লিক করে নামজারি আবেদন ফরম পুরুন করুন এবং পরবর্তী ধাপ সমুহ অনুসরণ করুন।
জমি খারিজ করতে কত দিন লাগে ?
জমি খারিজ করতে সাধারণত ২৮ দিন সময় লাগে।সহকারী কমিশনার ভূমি বা এ সি ল্যান্ড এই আবেদনের চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে অফিস সহকারী অনলাইনে এর খতিয়ান প্রস্তুত করে।
খতিয়ান প্রস্তুত হলে ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিট) ফি দেয়ার জন্য আবেদনে দেয়া মোবাইল নাম্বার এ এসএমএস পাঠানো হবে।
এখন ল্যান্ড পেজে আবেদন ট্র্যাকিং অপশনে বিভাগ সিলেক্ট করে আবেদন নম্বর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে ট্র্যাকিং করে আবেদন মঞ্জুর হয়েছে কিনা যাচাই করতে পারবেন।
জমি খারিজ করতে কি লাগে ?
আমরা অনেকে জানিনা জমি খারিজ করতে কি লাগে। এক্ষেত্রে আপনাকে আপনার জমির সঠিক অবস্থান অনুযায়ী আবেদন কারীর নাম, ঠিকানা, রেজিস্ট্রি ক্রয় দলিলের নম্বর ও সাল স্পষ্ট থাকতে হবে। একই সঙ্গে মূল দলিলের অনুলিপি, ভায়া দলিল, পরচা বা খতিয়ানের অনুলিপি, ভূ-উন্নয়ন কর পরিশোধের দলিল, ওয়ারিশান সনদপত্র (তিন মাসের মধ্যে ইস্যু করা), বণ্টননামা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) দিতে হবে।
জমি খারিজ করতে কতদিন সময় লাগে ?
জমি খারিজ করতে কতদিন সময় লাগে জানাটা জরূরী। যাতে আপনি আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে পারেন। জমি খারিজ করার প্রক্রিয়া সাধারণত ২৮ দিনের মধ্যে সম্পুর্ন হয়।
জমি খারিজ ফরম কিভাবে পাব ?
অনলাইনে জমি খারিজ ফরম পেতে মিউটেশন এ ভিজিট করে নামজারি আবেদন অপশন এ ক্লিক করতে হবে।
জমি খারিজ করার খরচ কত ?
জমি খারিজ করার খরচ হিসেবে আবেদনের সময় ২০ টাকা, নোটিশ জারি বাবদ ৫০ টাকা মোট ৭০ টাকা অনলাইন প্রেমেন্ট করতে হবে।
জমি খারিজ মানে কি ?
রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ১৪৩ ধারা মোতাবেক কোন ব্যক্তি কোন জমির নতুন ভাবে মালিকানা লাভ করার পর খতিয়ানে নতুন মালিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করার নাম ই জমি খারিজ।
শেষ কথা
এতক্ষণ আলোচনা করা হয়েছে নামজারি খতিয়ান অনলাইন বা অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি সম্পর্কে। এ সম্পর্কে আরও জানতে নিচের এই ভিডিও টি দেখতে পারেন ।