খারিজের আবেদন চেক বা অনলাইন খারিজ চেক কিভাবে করতে হবে তা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। আমাদের অনেকের কিছু না কিছু জমি রয়েছে অথবা আমরা আমাদের জীবনের অর্জিত অর্থ দিয়ে জমি ক্রয় করে থাকি।
এক কথায় আমরা আমাদের জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজনে জমি ক্রয়, বিক্রয়, ভাগ-বাঁটোয়ারা ইত্যাদি করে থাকি। আমরা সকলে ইতিমধ্যে জেনেছি জমি-জায়গা সংক্রান্ত যে সকল বেসিক বিষয়ে আমাদের জানা উচিত তার মধ্যে অন্যতম প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জমির নামজারি বা জমি খারিজ করা।
আপনি যদি কোন জমি ক্রয় বা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই আপনার জমির নামজারি বা খারিজ করতে হবে।
আমরা জানি বাংলাদেশে অধিকাংশ মামলা মোকদ্দমার প্রধান বিষয়বস্তু হলো জায়গা জমি সংক্রান্ত। আর এর অন্যতম প্রধান কারণ আমরা অনেকেই আমাদের জায়গা জমির নথিপত্র সম্পর্কে অজ্ঞ। আর এই সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ হলো জমি জায়গা সংক্রান্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এ সকল সমস্যার সমাধানের জন্য জমি সংক্রান্ত অনেক কাজ অনলাইনের মাধ্যমে সমাধানের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
এরই অংশ হিসেবে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর ভূমি মন্ত্রণালয় অনলাইনে মাধ্যমে জমি সংক্রান্ত প্রায় সকল সুবিধা প্রদান করছে। এ সকল সুবিধার মধ্যে অন্যতম হলো জমির নামজারি করা বা জমি খারিজ করা।
নামজারি খতিয়ান অনলাইন এর মাধ্যমে করতে হলে আপনাকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট মিউটেশন এ ই নামজারি আবেদন করতে হয়।
বিভিন্ন কারণে আপনাকে নামজারি খতিয়ান অনলাইন এর মাধ্যমে আবেদন করার পরে নামজারি আবেদন চেক বা অনলাইন খারিজ চেক করতে হতে পারে।
আজ আমি আমার এই আর্টিকেলে কিভাবে আপনি নামজারি আবেদন চেক বা অনলাইন খারিজ চেক করতে পারবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
নামজারি আবেদন চেক বা অনলাইন খারিজ চেক অথবা খারিজের আবেদন চেক
ধরে নিলাম আপনি জমি ক্রয় করেছেন অথবা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন, এখন আপনার নামে আপনার ক্রয় কৃত জমির নামজারি করতে হবে। সেজন্য আপনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট মিউটেশন এ নামজারি আবেদন করেছেন।
এখন আপনার নামজারি আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা কি সেটা জানার জন্য বার বার ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসে যেতে হতে পারে।
আপনি চাইলে বারবার ভূমি অফিসে না গিয়ে ঘরে বসে অনলাইন এর মাধ্যমে নাম জারি আবেদন চেক বা অনলাইন খারিজ চেক করতে পারেন।
এ পর্যায়ে অনলাইনে কিভাবে নামজারি আবেদন চেক বা অনলাইন খারিজ চেক করবেন সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ।
এছাড়া আপনি অনলাইনে নামজারি খতিয়ান বা জমি খারিজ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি এই পোষ্ট টি পড়তে পারেন ।
নামজারির সর্বশেষ অবস্থা
নামজারির সর্বশেষ অবস্থা দেখতে প্রথমে আপনাকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট মিউটেশন এ প্রবেশ করতে হবে। তাহলে আপনি নিচের ইন্টারফেস এর মত একটি পেজ দেখতে পাবেন।
উপরের পেইজের যে অপশন গুলো দেওয়া আছে সেখান থেকে আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা এই অপশনটিতে ক্লিক করুন। ক্লিক করার পর আপনি এমন একটি ফরম দেখতে পাবেন।
আবেদনের সঠিক তথ্য দিন লেখা এই ফর্মটি তে আপনার প্রতিটি তথ্য যেন সঠিক হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই ফর্মে আপনি আপনার বিভাগ, আবেদন আইডি ( নামজারি আবেদন অনলাইন করার সময় আইডি নম্বরটি মেসেজ এর মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে ) ।
এরপর আপনি জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার এবং সবশেষে দুই সংখ্যার গাণিতিক ফলাফল বসিয়ে খুঁজুন বাটনটিতে ক্লিক করুন।
পরবর্তী পেইজে আপনার যে মোবাইল নম্বরটি দিয়ে আবেদন করা হয়েছে সেই মোবাইল নম্বরটি দিতে হবে। মোবাইল নাম্বারটি দেওয়ার পরে দুই সংখ্যার গাণিতিক ফলাফল প্রদান করার পরে খুঁজুন বাটনে ক্লিক করুন।
আপনার প্রধানকৃত তথ্য যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে পরবর্তী পেজে আপনার নামজারির সর্বশেষ অবস্থা দেখতে পাবেন। এভাবেই আপনি আপনার কাঙ্খিত নামজারি আবেদন চেক বা অনলাইন খারিজ চেক এর কাজটি সম্পন্ন করতে পারেন।
নামজারি করতে কতদিন সময় লাগে জানুন
নামজারি করতে কতদিন সময় লাগে আমরা অনেকেই জানিনা। আজ আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করতে যাচ্ছি নামজারি করতে কতদিন সময় লাগে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যেখানে নতুন নিয়মে নামজারি করতে কতদিন লাগে তা উল্লেখ করা হয়েছে।
নিম্নে উক্ত চিঠি অনুযায়ী নতুন নিয়মে নামজারি করতে কতদিন লাগে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হলো।
১। কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান যদি নামজারি আবেদন করে থাকে তার নামজারি ৭ কার্য দিবসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
২। সনদ প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নামজারি করার ক্ষেত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কিছু সুবিধা প্রদান করেছে। তাই সব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নামজারী আবেদন এর প্রেক্ষিতে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে সম্পন্ন করে দেবে।
৩। প্রবাসী দের মধ্যে যে সকল জমি মহানগর এলাকার মধ্যে অবস্থিত তার নামজারি করতে ১২ কার্য দিবস সময় লাগে।এবং প্রবাসীদের মধ্যে যারা অন্যান্য এলাকায় বসবাস করে তাদের জমির নামজারি করতে ৯ কার্য দিবস সময় লাগে।
৪। সর্বশেষ অন্যান্য ক্ষেত্রে অর্থাৎ সাধারণ জনগণের জন্য নামজারি করতে ২৮ কার্য দিবস পর্যন্ত সময় লাগে। এছাড়াও যদি আপনার প্রধান কৃত কাগজপত্রে যদি জটিলতা থাকে তাহলে সময় আরো বেশি লাগতে পারে।
মিস কেইস কাকে বলে জানুন
রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ১৫০ ধারার ক্ষমতাবলে রাজস্ব অফিসার অর্থাৎ সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এ সি ল্যান্ড ধারা-১১৬, ১১৭ ও ১৪৩ এর দ্বারা নামজারি,জমাখারিজ ও জমা একত্রিকরণ এর যে আদেশ দিয়ে থাকেন তা পূর্ণ বিবেচনায় রাখতে পারেন।
উক্ত ১৫০ ধারায় কয়েকটি মামলা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। যেমন আপনার জমি অন্য কারও নামে নামজারি হয়ে থাকলে, দলিলে বা খতিয়ানে কোনো প্রকার ভূল থাকলে ইত্যাদি ক্ষেত্রে রাজস্ব অফিসার অর্থাৎ সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এ সি ল্যান্ড এর নিকটে মামলা দায়ের করা যায়। এই মামলা কে মিস কেইস বলা হয়।
মিস কেইস করার নিয়ম বা মিস কেইস লেখার নিয়ম
- একটি সাদা কাগজে আপনার জমির এলাকার নিকটস্থ সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর কি ধরণের প্রতিকার পেতে আগ্রহী তা বিস্তারিতভাবে লিখতে হবে। এছাড়া বিবাদীর নাম, বিবাদীর নামে কোন খতিয়ান তৈরি হয়ে থাকলে তার বিবরণ এবং নিজের স্বত্ব কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার বিবরণ থাকতে হবে।
- নামজারি আবেদনের মতো ২০/- (বিশ) টাকা কোর্ট ফি আবেদনের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। আপনি যে অভিযোগর ভিত্তিতে মিস কেইস করবেন তার স্বপক্ষে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে।
- আপনার আবেদন টি সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এ সি ল্যান্ড ভালো ভাবে যাচাই-বাছায় করবে। এবং যদি আপনার অভিযোগ টি যথাযথ যুক্তিযুক্ত মনে হয় তা হলে আপনার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এ সি ল্যান্ড বাদি এবং বিবাদি উভয় কে একটি নিদিষ্ট দিনে শুনানির জন্য ডাকবে।
- সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এ সি ল্যান্ড বাদি এবং বিবাদি উভয় এর কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই-বাছাই এবং পরীক্ষা করে দেখবেন কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল। তারই প্রেক্ষিতে এই সকল সমস্যার সমাধান করে থাকেন। যদি আপনার অন্য কারো নামে হয়ে থাকে মিস কিসের মাধ্যমে আপনার জমির নামজারির সমস্যা সমাধান করতে পারেন।
- মিস কেসের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা হয়েছে।একটি নির্দিষ্ট দাগের জমির কয়েকজন মালিক থাকতে পারে। স্বাভাবিকভাবে একটি দাগের জমির কয়েকজন মালিক থাকলে কয়েকটি নামজারি তৈরি হয়।
- যদি একজন মালিকের জমির নামজারি অন্য কারো নামে হয়ে থাকে আর তখন সে ব্যক্তি উক্ত মালিকের নামে মিস কেইস করে থাকলে ওই একই দাগের জমির যতগুলো মালিকের নামে নাম জারি করা হয়েছিল সকল নামজারি সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এ সি ল্যান্ড বাতিল বলে ঘোষণা করতে পারতো।
ভূমি মন্ত্রণালয় এজন্য একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে যেখানে এক্ষেত্রে সকল মালিকের নামজারি বাতিল করা যাবে না বলে নির্দেশ প্রদান করা হয়। শুধুমাত্র বিবাদমান দুই বা ততোধিক মালিকের নামজারি বাতিল বলে গণ্য করা হবে।
জমির নামজারি করতে কত টাকা লাগে ?
জমির নামমজারি করতে কোট ফি ২০ টাকা, নোটিশ জারি বাবদ ৫০ টাকা, খতিয়ান সরবরাহ ফি ১০০ টাকা এবং দলিল এর জন্য সরকারি ফি ১০০০ টাকা। সর্বমোট ১১৭০ টাকা খরচ হয়ে থাকে।
নামজারি বাতিল করার নিয়ম কি ?
নামজারি বাতিল করার জন্য সহকারি ভূমি কমিশনার বরাবর আবেদন করতে হবে । এর জন্য আপনাকে কোর্ট ফি ২০ টাকা দিতে হবে । এবং বাদি , বিবাদি , জমির বর্ননা , মালিকানা প্রমাণ পত্র , নামজারির ফলে আপনার কি স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়েছে এবং কিভাবে হয়েছে তা উল্লেখ করতে হবে ।
নামজারি খতিয়ান চেক বা খতিয়ান আবেদন চেক করার নিয়ম কি ?
নামজারি খতিয়ান চেক করতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ই পর্চা ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন। এখানে নামজারি খতিয়ান অপশন টি তে ক্লিক করূন। নিচের ফর্ম এ নিদিষ্ট তথ্য প্রদান করে সকল নির্দেশনা অনুসরণ করে সাবমিট করুন তা হলে নামজারি খতিয়ান চেক করতে পারবেন।
ই নামজারি করতে কি কি লাগে ?
১। আবেদন কারীর ছবি
২। স্বাক্ষর
৩। জমির দলিল
৪। ওয়ারিশ সনদ
৫। এন আই ডি
৬। জমির সর্বশেষ খতিয়ান
নামজারি আবেদন ফরম pdf যেভাবে পাবেন?
নামজারি আবেদন ফরম pdf আকারে পেতে এখানে ক্লিক করুন।
ই-নামজারি আবেদন ফরম যেভাবে পাবেন
ই-নামজারি আবেদন ফরম বা অনলাইনে নামজারি আবেদন করার ফরম পেতে মিউটেশন এখানে ক্লিক করুন। ক্লিক করার পর নামজারি আবেদন অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে আপনি ই-নামজারি আবেদন ফরম পেয়ে যাবেন।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা এতক্ষণ যাবৎ আমি আপনাদের জন্য আলোচনা করেছি কিভাবে আপনি আপনার নামজারী আবেদন চেক বা অনলাইন খারিজ চেক করতে পারবেন।
নামজারির সর্বশেষ অবস্থা সহ নাম জারি করতে কতদিন সময় লাগে সে সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া মিস কেইস সম্পর্কে ও কিছুটা ধারণা দেওয়া হয়েছে ।
প্রিয় বন্ধুরা জমি জায়গা আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এই সম্পদের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ একান্ত জরুরি।
আপনি সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ তখনই করতে পারবেন যখন এই সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকবে। আর সেই চিন্তা থেকে আমরা শুধুমাত্র আপনাদের বেসিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
বাংলাদেশে যত মামলা মুকাদ্দামা হয়ে থাকে তার মধ্যে জমি জায়গা সংক্রান্ত মামলা মোকাদ্দামায় বেশি। আপনি যদি জমি জায়গার সংক্রান্ত এ সকল বেসিক বিষয়গুলো জেনে থাকেন তাহলে অনেক মামলা-মোকদ্দমা থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন এবং আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও ঝামেলা মুক্ত থাকবে,ধন্যবাদ।