ভূমি মন্ত্রণালয় খতিয়ান অনুসন্ধান করার নিয়ম

ভূমি মন্ত্রণালয় খতিয়ান অনুসন্ধান কিভাবে করতে হবে তা এখানে জানতে পারবেন। ভূমি বা জমি আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপুর্ণ এবং দামি সম্পত্তি । তাছাড়া জমি আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ ।

আমাদের বসবাসের জন্য এবং পরবর্তি বংশধরের বাসস্থানের জন্য জায়গা রেখে যাওয়া আমাদের একান্ত কর্তব্য । এক্ষেত্রে আমরা উত্তরাধীকার সূত্রে জমি পেয়ে থাকি অথবা আমরা আমাদের জীবনের সঞ্চয় দিয়ে জমি ক্রয় করে থাকি।

তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে আমরা আমাদের জরুরী প্রয়োজনে জমি বিক্রয় করে থাকি । তাহলে বলা যায় আপনার যদি কোন জমি থাকে বা আপনি জমি ক্রয় করেন বা বিক্রয় করেন বা আপনার সম্পত্তি উত্তরাধীকারীদের মধ্যে বণ্ঠন করেন তাহলে এ সকল ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই জমির সকল প্রকার কাগজ পত্র সম্পর্কে জানতে হবে ।

জমির সকল প্রকার দলিল দস্তাবেজের মধ্যে খতিয়ান বা পর্চা অন্যতম ।  অতীতে আমরা দেখেছি জমি-জয়গার কাগজ পত্র সংগ্রহ করা অনেক সময় সাপেক্ষ এবং কষ্ট সাধ্য ব্যাপার ছিল বিধায় নানান ভাবে অনেক টাকা-পয়সা খরচ হয়ে যেত ।

কিন্তু বর্তমানে ইন্টারনেটের বহুল ব্যবহারের সুবিধার কারনে অতি সহজে অনলাইনের মাধ্যমেই  জমির খতিয়ান সহ ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা পাওয়া যাবে। তবে আপনি যদি এ বিষয়ে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে প্রথমে আপনার সাময়িক অসুবিধা হতে পারে ।   

আজ এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমি আপনাদের জানাব কিভাবে ভূমি মন্ত্রণালয় খতিয়ান অনুসন্ধান করা যায় বা খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধান এবং খতিয়ান বা পর্চা কিভাবে পাওয়া যায়। 

গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ভূমি সংক্রান্ত সেবা সমূহ অনলাইনে প্রদানের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভূমি সক্রান্ত বিভিন্ন প্রকারের সেবা যেমন  খতিয়ান ( বি আর এস, সি এস , আর এস , এস এ , দিয়ারা , পেটি, ই-নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর, নামজারী খতিয়ান,ডিজিটাল ল্যান্ড রেকর্ড, রেন্ট সার্টিফিকেট মামলা, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সেবা অনলাইনের মাধ্যমে প্রদান করে থাকে।  

ডিজিটাল রেকর্ড রুম বাংলাদেশ থেকে সি এস খতিয়ান কি ভাবে চেক করবেন 

আপনি যদি ডিজিটাল রেকর্ড রুম বাংলাদেশ থেকে সি এস খতিয়ান চেক করতে চান তা হলে আপনাকে আগে জানতে হবে ডিজিটাল রেকর্ড রুম কি ।  

আমরা জানি আমাদের জমি জায়গার সকল কাগজ পত্রের তথ্য জেলা রেকর্ড রুমে সংরক্ষন করা হয়ে থাকে । 

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনার অংশ হিসাবে এই সকল ডকুমেন্ট অনলাইনে সংরক্ষণ করা হচ্ছে । যার করনে আপনি অনলাইনে ভূমি সংক্রান্ত সকল সেবা পেয়ে থাকেন।  

আপনি চাইলে অনলাইনে আপনার জমির সি এস খতিয়ান চেক করতে পারবেন । তার মানে ডিজিটাল রেকর্ড রুম থেকে সি এস খতিয়ান কি ভাবে চেক করতে হলে এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সার্ভে খতিয়ান অপশনে ক্লিক করুন  । 

ক্লিক করার পরে আপনি পরবর্তি ধাপ সমূহ অনুসরন করুন । পরবর্তি ধাপ সমুহ জানতে নিচের লেখা গুলো মনযোগ দিয়ে পড়ুন । 

অনলাইনে জমির খতিয়ান অনুসন্ধান করার প্রক্রিয়া 

সাধারনত আপনি দুই টি প্রক্রিয়ায় জমির খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধান করতে পারেন, যথা- 

১। সরাসরি স্থানীয় ভূমি অফিসে গিয়ে।  

২। অনলাইনের মাধ্যমে।  

তবে আমি আলোচনা করতে যাচ্ছি অনলাইনে আপনি কিভাবে জমির খতিয়ান অনুসন্ধান করা যায়। এক্ষেত্রে আপনাকে কয়েকটি তথ্য সম্পর্কে জানতে হবে। যেমন,  

১। জমি যে স্থানে আছে তার পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা যেমন বিভাগ, জেলা,উপজেলা, গ্রাম/ মৌজা। 

২। মালিকের নাম,মালিকের পিতা-মাতার নাম, জমির দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বর ইত্যাদি।  

ই পর্চা ওয়েবসাইটের পরিচিতি । 

আপনি আপনার কম্পিউটার বা এন্ড্রয়েড মোবাইল এর সাহায্যে অনলাইনের মাধ্যমে জমির খতিয়ান অনুসন্ধান করতে পারেন।

তার জন্য আপনাকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের  একটা নিদিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর এ রকম একটি পেজ দেখতে পাবেন। 

ভূমি মন্ত্রণালয় খতিয়ান অনুসন্ধান

অনলাইন খতিয়ান অনুসন্ধান করুন 

এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পরে আপনি যে অপশন গুলো পাবেন তার থেকে দুটি অপশনে খতিয়ান বের করতে পারবেন। অপশন দুটি হলো-

১। সার্ভে খতিয়ান অনুসন্ধান।  

২। নামজারি খতিয়ান অনুসন্ধান।  

আপনি যে ধরনের খতিয়ান অনুসন্ধান করতে চান সেটি ক্লিক করুন। নিম্নে দুটি বিষয়ে আলোচনা করা হলো।  

সার্ভে খতিয়ান অনুসন্ধান করুন

সার্ভে খতিয়ান অনুসন্ধান করতে চাইলে আপনাকে সার্ভে খতিয়ান অনুসন্ধান অপশনে ক্লিক করতে হবে। 

ক্লিক করার পরে আপনি নিচে একটি ফর্ম দেখতে পাবেন । এখানে আপনার জমির অবস্থান অনুযায়ী সকল তথ্য প্রদান করুন ।  

১। বিভাগ  

২। জেলা 

৩। উপজেলা  

৪। কি ধরনের খতিয়ান ( আর এস) 

৫। মৌজ / গ্রাম 

৬। মৌজা সিলেক্ট করার সাথে সাথে পরের কলামে নিদ্ধারিত মৌজার সমস্ত খতিয়ান নম্বর  এবং মালিকের নামও চলে আসবে। এখানে আপনার খতিয়ান খুজে না পেলে উপরে সার্চ বক্স এ সার্চ করুন। খতিয়ান নং অথবা মালিকের নাম লিখে সার্স করতে হবে। 

৭। খতিয়ান নম্বর এর উপরে ডাবল ক্লিক করুন  

সার্ভে খতিয়ান অনুসন্ধান

ক্লিক করার পরে আপনি এমন একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন । 

হালসাবেক

সার্ভে খতিয়ানের ক্ষেত্রে আপনি  উপরের বাদিকের কর্নারে হালসাবেক এবং মাঝে বিস্তারিত লেখা একটি বাটন দেখতে পাবেন। হালসাবেক অথবা বিস্তারিত লেখা বাটন এর উপর ক্লিক করলেই নিচের মত একটি ইনটারফেসে বিস্তারিত দেখা যাবে। এভাবে আপনার যাবতীয় তথ্য যাচাই করতে পারবেন। 

খতিয়ান বিস্তারিত

অনলাইনে নামজারি খতিয়ান অনুসন্ধান করুন  

নামজারি খতিয়ান অনুসন্ধান করতে হলে আপনাকে নামজারি খতিয়ান অনুসন্ধান অপশন টিতে ক্লিক করতে হবে।  

নামজারি খতিয়ান অনুসন্ধান

তারপর উক্ত পেজে যে সকল তথ্য চাওয়া হয়েছে সে সকল তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে। যেমন বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং খতিয়ানের অন্যান্য তথ্য সমূহ।  

এই  দুই প্রকারের খতিয়ান অনুসন্ধান শেষে আপনি নিচের ছবির মত একটি ইন্টারফেস  দেখতে পাবেন ।

 খতিয়ান আবেদন

এই পেজে আপনার খতিয়ানের তথ্য দেখানো হচ্ছে।  আপনি চাইলে খতিয়ান আবেদন বাটন থেকে আপনার খতিয়ান এর একটি অনলাইন কপি সংগ্রহ করে নিতে পারেন। 

উপরের লেখা পড়ে আপনি অবশ্যই জেনেছেন কিভাবে ভূমি মন্ত্রণালয় খতিয়ান অনুসন্ধান করা যায়। এখন আমরা আলোচনা করবো কিভাবে অনলাইনে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি আবেদন ও পাওয়া যাবে। 

জমির পর্চা ডাউনলোড বাংলাদেশ করবেন কিভাবে 

আপনি যদজমির পর্চা ডাউনলোড বাংলাদেশ করতে চান তাহলে আপনাকে একটি আবেদন ফরম পূরন করতে হবে । আবেদন ফরমটি পেতে আপনাকে উপরের ছবির মধ্যে খতিয়নের আবেদন বাটন এর উপর ক্লিক করলে আপনার সামনে নিচের ফরমটি চলে আসবে। 

খতিয়ান আবেদন ফরম

আবেদন ফরম পূরন 

ফরমটিতে যে সকল তথ্য চাওয়া হয়েছে তা সঠিকভাবে পূরণ করে যাচাই বাটনে ক্লিক করতে হবে। যদি আপনার তথ্য সঠিক থাকে তাহলে যাচাই বাটনে ক্লিক করলেই সঠিক হয়েছে একটা লেখা চলে আসবে। 

ফি পরিশোধের মাধ্যম লেখার নিচে আপনি টাকা পরিশোধের জন্য কয়েকটি মাধ্যম পাবেন । যে কোন একটি উপায়ে আপনি টাকা পরিশোধ করতে পারবেন । প্রেমেন্ট করার পরে আপনি আপনার খতিয়ান টি দেখতে পাবেন । এখন এটি আপনি সরাসরি প্রিন্ট করতে পারেন ।  

আপনি ekhatian মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন এর মাধ্যমে আপনার জমির খতিয়ান অনুসন্ধান করতে পারেন ।এক্ষেত্রে আপনাকে একই তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে । 

এছাড়া ও আপনি যদি কিভাবে বাংলাদেশ এ অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই করা যায় এবং জমির রেকর্ড কত বছর পর পর হয় সে সম্পর্কে জানতে চান তা হলে অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই বাংলাদেশ জমির রেকর্ড কত বছর পর পর হয় জানুন এই পোষ্ট টি পড়তে পারেন।

জমির খতিয়ান কাকে বলে ?

 
খতিয়ান হল জমির বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত একটি স্বত্ব যা কনো জমির মালিকানা, পিতা বা স্বামীর নাম, ঠিকানা, দাগ নম্বর, ভূমির পরিমাণ, হিস্যা(অংশ), খাজনা ইত্যাদি বিবরণসমূহ বিদ্যমান থাকে। মূলত জমির মালিকানা স্বত্ব রক্ষা ও  রাজস্ব আদায়ের জন্য জরিপ বিভাগ কর্তৃক প্রস্তুত করা হয়। 

খতিয়ান কত প্রকার কি কি ? 

 
জমির খতিয়ান ৪ প্রকার যথা- 
১. সি. এস খতিয়ান 
২. এস. এ খতিয়ান 
৩. আর. এস খতিয়ান 
৪. বি. এস খতিয়ান / সিটি জরিপ 

সিএস খতিয়ান কি ?

 
ব্রিটিশ সরকার  কর্তৃক  ১৯৪০ সালে জরিপ করে যে খতিয়ান তৈরি করে তাকে সি এস খতিয়ান বলা হয়ে থাকে।  
এই সি এস খতিয়ান আমদের দেশের প্রথম খতিয়ান হিসাবে ধরা হয়। 

এস এ খতিয়ান কত সালে হয় ?

তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের অধীনে ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের চতুর্থ অধ্যায় এর ১৭ হতে ৩১ ধারা মতে ১৯৫৬-৬০ সালের দিকে যে খতিয়ান তৈরি করা হয় তাকে এস. এ (State Acquision) খতিয়ান বলে। 

আর এস খতিয়ান কত সালে হয় ?

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সার্ভে কৃত খতিয়ান এ টি। পর্বের তৈরিকৃত খতিয়ানের ভূল ত্রুটি সংশোধন করে নতুনভাবে উদ্যোগ নিয়ে যে খতিয়ান প্রস্তুত করেন তা আর. এস (Renisional Survey) খতিয়ান নামে পরিচিত। 

বিএস খতিয়ান কি ?

১৯৯৮-৯৯ সাল থেকে শুরু হওয়া জরিপ যা বর্তমান সময় পর্যন্ত চলমান। এ জরিপকে বি. এস খতিয়ান বা সিটি জরিপ বলে। এই খতিয়ান প্রস্তুতের কার্যক্রম এখনো চলছে। 

ই পর্চা কি ধরনের সেবা ?

তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে জমি জায়গায় খতিয়ান সংক্রান্ত সকল সেবা অনলাইনের মাধ্যমে প্রদান করাকে ই পর্চা বলে। তাই এক কথায় বলা যায় ই পর্চা হলো জমি সংক্রান্ত অনলাইন সেবা । 

শেষ কথা

বন্ধুরা এতক্ষন আলোচনা করা হয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয় খতিয়ান অনুসন্ধান করার নিয়ম সম্পর্কে। আশা করি সকলে এই আলোচনা থেকে উপকৃত হবেন । এই আলোচনার ভিতরে যদি কোন প্রকার ভূল হয়ে থাকে তা হলে কমেন্টেস এর মাধ্যমে জানবেন । যার ফলে আমি সহ অন্যান্ন বন্ধুদের উপকার হয়।

Leave a Comment