দানপত্র দলিল বাতিল করার নিয়ম ও দানপত্র দলিল কাকে দেওয়া যায় বিস্তারিত জানুন।

দানপত্র দলিল বাতিল করার নিয়ম ও দানপত্র দলিল কাকে দেওয়া যায় তা এই আর্টিকেলে জানতে পারবেন। এখানে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ।

জমি জায়গায় একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে দলিল। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী আপনার সম্পত্তির মালিকানা প্রমানের জন্য দলিল অপরিহার্য ।

দলিল বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে যেমন, সাব-কবলা, হেবা দলিল, দানপত্র দলিল, এওয়াজ দলিল, হেবা বিল এওয়াজ দলিল ইত্যাদি । তার মধ্যে হেবা দলিল এবং দানপত্র দলিল অন্যতম।

তবে মনে রাখতে হবে যে প্রত্যেক প্রকারের দলিল আবশ্যই গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর সকল আইন মেনে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে।

দানপত্র দলিল সম্পর্কে জানতে হলে হেবা দলিল সম্পর্কে ও জানতে হবে। কারন হেবা এর আভিধানিক অর্থ হলো দান বা গিফট।

এই আর্টিকেলে দানপত্র দলিল বাতিল করার নিয়ম ও দানপত্র দলিল কাকে দেওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে।

দানপত্র দলিল বাতিল করার নিয়ম জানুন।

কোন ব্যক্তি সাধারণত তার প্রিয় ব্যক্তি কে জমি দান করে থাকে। আবার অনেকে মসজিদ, ঈদগাহ ইত্যাদি ধর্মীয় স্থাপনার জন্য জমি দান করে থাকে।

আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি কেও যখন কোন জমি দান করে তখন উক্ত গ্রহিতাকে উক্ত জমির দখল বুঝিয়ে দিতে হয়।গ্রহিতা তখন তার নিজের নামে উক্ত জমি নামজারি করবে।

হেবার ক্ষেত্রে গ্রহিতা তার জমি গ্রহণের বিপরীতে কোন বিনিময় প্রদান না করলেও গ্রহিতাকে দাতার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। বৃদ্ধ বয়সে এবং অসুস্থ হলে দেখা শুনা করবে।

এখন প্রশ্ন হলো যখন কেউ তার জমি হেবা বা দান করে,উক্ত জমি দাতা চাইলেই কি হেবা বা দানপত্র করতে পারবে?

বর্তমানে যে ফরমেটে হেবা বা দানপত্র দলিল প্রস্তুত করা হয় তার সব আইনি নির্দেশনা ঠিক থাকলে দাতা চাইলে জমির দানপত্র দলিল বাতিল করতে পারবে না।
তবে উপযুক্ত কারন দেখিয়ে কোর্টে মামলা করতে হবে। মামলায় জিতলে কোর্ট থেকে ডিক্রি জারি করা হবে। উক্ত ডিক্রির বলে হেবা বা দানপত্র দলিল বাতিল করা যাবে।

দানপত্র দলিল কাকে দেওয়া যায়

কোন ব্যক্তি তার জমি যে কাওকে দানপত্র করতে পারবে। তা সে যে কোন সম্প্রদায়ের হোক না কেন। এখানে হেবার সাথে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। হেবা শুধু মাত্র মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজন নিকট আত্নীয় দের মধ্যে করতে পারবে।

দানপত্র সকল ধর্মের মানুষ করতে পারবে। দানপত্র করতে হলে কোন প্রকার বিনিময় গ্রহন করা যাবে না তবে দাতা কিছু শর্ত প্রদান করতে পারেন।

দানপত্র দলিল খারিজ বা নামজারি করার নিয়ম সম্পর্কে জানুন।

দানপত্র দলিল খারিজ করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত জমির দলিল তৈরি ও রেজিষ্ট্রেশন করা হয় আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিস কর্তৃক।

ধরুন আপনি হেবা বা দানপত্রের মাধ্যমে কোন জমি পেলেন। এর পর জমির দলিল রেজিষ্ট্রেশন করা হলো। এই পরিবর্তন এর বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় অবগত হলো না।

উক্ত জমির মালিকানা পরিবর্তন এর বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় তখনি জানবে যখন আপনি উক্ত জমির মালিকানা পরিবর্তন করে আপনার নামে অন্তর্ভুক্ত করবেন

এর জন্য আপনার জমির অবস্থান অনুযায়ী নিদিষ্ট ভুমি অফিসে গিয়ে জমির মালিকানা পরিবর্তনের জন্য নামজারি বা খারিজ করতে হবে।

আপনি অনলাইনে জমির মালিকানা পরিবর্তন এর জন্য নামজারি আবেদন করতে পারবেন। কিভাবে অনলাইনে নামজারি আবেদন করতে হবে তা বিস্তারিত জানতে চাইলে এই পোস্ট টি পড়তে পারেন।

দানপত্র দলিল কি বিক্রি করা যায় ?

অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে দানপত্র দলিল বিক্রি করা যায় কি না। হ্যা, দানপত্র দলিল বা দানপত্র হিসেবে গ্রহণ কৃত জমি বিক্রি করা যায়।

তবে উক্ত জমি দানপত্র দলিল করার সময় কি ধরনের শর্ত রাখা হয়েছে তা দেখতে হবে। অনেকে জমি দান করার সময় বিক্রি করতে পারবে না এ ধরনের শর্ত দিয়ে থাকতে পারে।

এ ছাড়া অন্য কনো বাধা নেই। কারন দানপত্র দলিল অন্য সকল দলিলের মত রেজিষ্ট্রেশন করতে হয় এবং নামজারি করতে হয়।

জমি দানপত্র করার নিয়ম সম্পর্কে জানুন।

জমি দানপত্র করতে হলে আপনার জানা উচিত হেবা ও দানের মধ্যে পার্থক্য কি? কারন অনেকে হেবা ও দান কে দান বলে থাকে। যদিও দুটি শব্দের মূল আভিধানিক অর্থ হলো দান।

হেবা শুধু মাত্র মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য নিকট আত্নীয় দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর দান হলো সকল সম্প্রদায়ের জন্য যে কারোর জন্য প্রযোজ্য।

হেবা ও দান উভয়ই করতে হবে কোন কিছুর বিনিময় ছাড়া,তবে কিছু শর্ত দেয়া যেতে পারে। জমি দানপত্র করতে হলে দাতা, গ্রহিতা এবং সাক্ষী সহ সকল প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সাথে নিয়ে উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দলিল প্রস্তুত করতে হবে এবং উক্ত দলিল রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে।

সর্বশেষ দানকৃত জমি গ্রহিতা কে দখল বা বুঝিয়ে দিতে হবে। আর গ্রহিতার কাজ হলো রেজিষ্ট্রেশন করার পরে প্রাপ্ত কাগজ পত্র দিয়ে উক্ত জমির নামজারি বা খারিজ করা।

হেবা অর্থ কি ?

হেবা শব্দ একটি আরবি শব্দ। যার আভিধানিক অর্থ হলো দান বা গিফট।
যখন কোন মুসলিম ব্যক্তি তার কোন নিদিষ্টভোগী ওয়ারিশ যেমন বাবা,মা, দাদা দাদি,স্বামী, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, ভাই,বোন,পোতা,পুতবি,নাতি, নাতনি এর মধ্যে কোন কিছুর বিনিময় ব্যতীত কোন জমি বা সম্পত্তি দান করে তখন তাকে হেবা বলে।
আর হেবা কৃত জমির যে দলিল প্রস্তুত করা হয় তাকে হেবা দলিল বলে।

দানপত্র দলিল কাকে বলে ?

কোন ব্যক্তি যদি তার নিজ ইচ্ছায় অপর কোন ব্যক্তি বা দূরবর্তী আত্নীয় কে কোন জমি শর্তহীন ভাবে দান করে তখন উক্ত দান কৃত জমির যে দলিল প্রস্তুত করা হয় তখন তাকে দানপত্র দলিল বলে।
মনে রাখতে হবে উক্ত দান কৃত জমি অবশ্যই গ্রহীতা কে দখল দিতে হবে।

দানপত্র দলিল করতে কি কি লাগে ?

১। দানকৃত জমির দলিল
২। উক্ত জমির সর্বশেষ খতিয়ান
৩। হাল সন পর্যন্ত জমির খাজনা দেওয়ার রশিদ
৪। দাতা এবং গ্রহিতার জাতীয় পরিচয় পত্র / জন্ম নিবন্ধন / পাসপোর্ট এর ফটোকপি
৫। দাতা এবং গ্রহিতার সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৬। টিন সার্টিফিকেট ( প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
৭। উত্তরাধিকার সনদ ( প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

শেষ কথা

এতক্ষণ আলোচনা করা হয়েছে দানপত্র দলিল বাতিল করার নিয়ম ও দানপত্র দলিল কাকে দেওয়া যায় সে সম্পর্কে। এছাড়া হেবা দলিল সম্পর্কে ও বেশ কিছু বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে।
আশা করি সকলে বিষয় টি সম্পর্কে খুব ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছেন,ধন্যবাদ।

Leave a Comment