খাস জমি কত প্রকার এবং খাস জমি রেকর্ড করার নিয়ম জানুন।

খাস জমি কত প্রকার এবং খাস জমি রেকর্ড করার নিয়ম সম্পর্কে আমরা এই আর্টিকেলে জানব। খাস জমি বলতে আমরা সাধারণত সরকারি জমি কে বোঝায়।

কিন্তু প্রকৃত অর্থে সকল সরকারি জমি খাস জমি নয়। বাংলাদেশে অনেক সরকারি জমি রয়েছে যা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান বা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এ সকল জমি খাস হিসাবে ধরা হয় না।

বাংলাদেশের অনেক ভূমি হীন মানুষ সরকারি খাস জমি বন্দোবস্তো বা লিজ নিয়ে একটি নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত ভোগ দখল বা চাষাবাদ করতে পারে। এক্ষেত্রে তাদেরকে একটি সরকারি নীতিমালা মানতে হয়।

কোন ব্যক্তি যদি এ সংক্রান্ত সকল নীতিমালা মেনে খাস জমি পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক এর নিকটে আবেদন করে এবং সে ব্যক্তি যদি কোন জমি পায় তাহলে তাকে অবশ্যই উক্ত জমি তার নামে রেকর্ড করতে হবে।

আপনারা অনেকেই এ বিষয়ে খুব বেশি অবগত নন। এখন এই আর্টিকেলে খাস জমি কি,খাস জমি কত প্রকার ও খাস জমি রেকর্ড করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

খাস জমি মানে বা অর্থ কি?

সরকারের অধীনে থাকা ঐ সকল জমি যা সম্পুর্নভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং সরকার নিদিষ্ট নিয়ম নীতি অর্পণ করে কাওকে বন্দোবস্তো বা লিজ দিতে পারে বা বন্দোবস্তো বাতিল করতে পারে৷ এ সকল জমি গুলো কে খাস জমি বলে।

জমি খাস হয় কিভাবে জানুন।

সাধারণত প্রত্যেক মৌজার ১ নং খতিয়ান ভুক্ত জমি গুলোকে সরকারি খাস জমি হিসাবে গন্য করা হয়। ১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের বিধান বলে পরিত্যাক্ত কৃষি জমি গুলো খাস করা হয়ে থাকে ৷

নদী বা সাগরের ভাঙনের ফলে ভেঙে যাওয়া জমি পুনারায় ভেসে উঠলে বা চর জাগলে অথবা নদীর গতিপথ বদলে ভেসে উঠা চর সরকারি খাস জমি হিসাবে গন্য করা হয়।

কোন হোল্ডিং বা ইহার অংশ বিশেষ (কৃষি বা অকৃষি) বকেয়া খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের জন্য ১৯১৩ সালের বেঙ্গল পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি এক্ট মোতাবেক দায়ের কৃত সার্টিফিকেট মামলায় নিলামকৃত ভূমি সরকার ক্রয় করলে সেই ভূমিও খাস জমি হিসাবে গণ্য হবে ৷

যে সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ১০০ বিঘার বেশি জমি সরকারের অধীনে সমর্পণ করেছে সে সকল জমি খাস জমি হিসাবে গন্য। এ ক্ষেত্রে কৃষি জমির পরিমাণ ছিলো ৬০ বিঘা। এই ৬০ বিঘার অতিরিক্ত কৃষি জমি সরকারের অধীনে খাস জমি হিসাবে গন্য।
এছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে সকল জমি মালিক বিহীন সে সকল জমি খাস জমি।

খাস জমি কত প্রকার?

সরকারের অধীনে যে সকল খাস জমি রয়েছে তা সাধারণত ২ প্রকার। যথা- কৃষি জাতীয় খাস জমি এবং অকৃষি জাতীয় খাস জমি।

খাস জমি পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিহীন কাকে বলে?

১। যে পরিবার টির বসত বাড়ি এবিং কৃষি জমি মোটেই নাই কিন্তু উক্ত পরিবার টি কৃষি নির্ভর।
২। যে পরিবারের বসতভিটা আছে কৃষি জমি নেই এবং কৃষি নির্ভর।
৩। যে পরিবারের বসতভিটা এবং কৃষি জমি উভয়ই আছে কিন্তু মোট জমির পরিমাণ ০.৫০ একর বা ৫০ শতাংশের কম, কিন্তু পরিবার টি কৃষি নির্ভর।
উল্লেখ্য কৃষি নির্ভর বলতে কোন পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য কৃষি শ্রমিক হিসেবে অন্যের জমিতে কাজ করে অথবা বর্গা চাষ করে।

খাস জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানুন।

খাস জমি বন্দোবস্তো পাওয়ার জন্য নির্ধারিত ফরমে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করতে হবে। উক্ত আবেদন উপজেলা রাজস্ব কর্মকর্তা গ্রহণ করবেন ৷ গ্রহণের সাথে সাথে তিনি তারিখ ও সময় উল্লেখ করে একটি প্রাপ্তি স্বীকার রশীদ দেবেন ৷

উক্ত রশিদে সম্ভাব্য বন্দোবস্ত পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচনের তারিখ ও সময় উল্লেখ করা থাকবে। আবেদন পত্র গ্রহণের নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার পরবর্তী কার্যদিবসে প্রাপ্ত আবেদন পত্রসমুহ বিবেচনার জন্য উপজেলা ভূমি সংস্কার কমিটি একটি প্রাথমিক সভায় বসবে ৷

খাস জমি বন্দোবস্তো পাওয়ার নীতিমালা অনুযায়ী যারা খাস জমি পাওয়ার যোগ্য তাদের একটি খসড়া প্রস্তুত করা হবে এবং অযোগ্য ব্যক্তি দের আবেদন বাতিল করা হবে। তবে এ সকল সিদ্ধান্ত কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে নেওয়া হবে। এবং উক্ত তালিকা নোটিশ বোর্ডে দেওয়া হবে।

মৌজা ভিত্তিক যোগ্য ভুমিহীন দের তালিকা প্রকাশ করার জন্য প্রতিটি মৌজায় অথবা ইউনিয়নে খোলা স্থানে (যেখানে লোকজন এর সমাগম বেশি) উপজেলা ভূমি বন্দোবস্তো কমিটি কর্তৃক একটি সভার আয়োজন করবে।

উক্ত সভার তারিখ নির্ধারণ ও জনসংযোগ এর দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার। উক্ত সভায় কমিটির প্রাথমিক সভায় নির্বাচন কৃত মৌজা ভিত্তিক খসড়ার অগ্রাধিকার তালিকা থেকে একজন করে ভূমিহীন পরিবারের প্রধানকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তাদের প্রাপ্য যোগ্যতা ও কি কারণে জমি বন্দোবস্তো পাবে তা বলা হবে।

উক্ত সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপস্থিত চেয়ারম্যান,ওয়ার্ড মেম্বারদের সাহায্যে আবেদনকারী দের সনাক্ত করবে এবং সকল তথ্যের সত্যতা যাচাই করবে। আবেদন কারীর ২ কপি ছবি জমা নেবে এবং তাতে সত্যায়িত সীল সহ স্বাক্ষর করবে। প্রত্যয়িত ছবির ১ কপি কবুলিয়ত ফরমে এবং ১ কপি পুনর্বাসন কার্ডের সাথে যুক্ত করবে।

এভাবে সকল কার্যক্রম শেষ করে একটি চুড়ান্ত তালিকা প্রনয়ন করবে এবং তা উপজেলার সকল সরকারি অফিসের নোটিশ বোর্ডে দেওয়া হবে।
উক্ত তালিকা সম্পর্কে কারো কোন অভিযোগ থাকলে তা পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসক এর নিকট দাখিল করতে বলা হবে।

ভূমিহীন পরিবার প্রধান অবগতি পত্র পেয়ে প্রতি একর বা তার অংশের জন্য ১.০০(এক টাকা) হারে সেলামী ও চলতি বছরের খাজনা ডি,সি,আরের মাধ্যমে তহশীল অফিসে জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করবে ৷

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সকল কার্যক্রম শেষ করে একটি সভার আয়োজন করবে। এবং সকলের উপস্তিতিতে উক্ত পরিবার কে একটি কবুলিয়ত ও জমির সকল কাগজ পত্র সহ দখল বুঝিয়ে দেবে।

খাস জমি রেকর্ড করার নিয়ম সম্পর্কে জানুন।

কবুলিয়ত এর কপি পাওয়ার পর উপজেলা (রাজস্ব) কর্মকর্তা একটি নামজারী কেইস তৈরি করবেন এবং ১৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে এই বন্দোবস্তকৃত জমিকে ১০ নম্বর রেজিষ্টারভুক্ত করবেন।

এই জমি উত্তরাধিকার সূত্র ব্যতিত হস্তান্তরযোগ্য নয় এই কথা টি খতিয়ানের মন্তব্য কলামে লিপিবদ্ধ করা থাকবে। রেকর্ড সংশোধন করে সংযোজনী-৯ এর ছকে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ভূমিহীন ও তহশীলদারকে জানিয়ে দেবে।

অনুমোদিত সকল কেইস রেকর্ড উপজেলা রাজস্ব কর্মকর্তার নিকট থাকবে ৷
প্রকৃত অর্থে খাস জমি আপনি অন্যান্য জমির মত রেকর্ড করার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। জমি আপন বন্দোবস্ত পেলে তখন কর্তৃপক্ষ আপনার নামে উক্ত জমির রেকর্ড ইস্যু করবে।

কিভাবে ব্যক্তিগত জমির নামজারি আবেদন করবেন তা জানতে পড়ুন – নামজারি খতিয়ান অনলাইন বা অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি

নামজারি খতিয়ান অনলাইন এ চেক বা যাচাই করার নিয়ম 

খাস জমি কি বিক্রি করা যায়?

খাস জমি বিক্রি করা যায় না। কারন খাস জমি হলো সরকার নিয়ন্ত্রিত। তবে সরকার কর্তৃক অর্পণ করা নীতিমালা অনুযায়ী ভূমিহীন দের বন্দোবস্তো দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে খাস জমি উত্তরাধিকার সুত্রে সন্তানেরা ভোগ দখল করতে পারবেন।

বন্দোবস্ত দলিল কি?

খাস জমি বন্দোবস্তো পাওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে আবেদনের করলে সরকার কর্তৃক জমি বন্দোবস্তো নীতিমালা মেনে গ্রাহক কর্তৃক নিদিষ্ট পরিমাণ ফি প্রদান করা হয়। কবুলিয়ত প্রদান করার পরে উক্ত জমি ভোগ দখল করার জন্য যে প্রমান পত্র প্রদান করা হয় তাকে কবুলিয়ত দলিল বলে।

খাস জমির মালিক কে?

যে সকল কৃষি বা অকৃষি জমি সরকার মালিকানাধীন এবং পূর্নাঙ্গ ভাবে সরকার নিয়ন্ত্রিত সে সকল জমি হলো খাস জমি।এ সকল জমি সরকার যে কাওকে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে বন্দোবস্ত বা লিজ দিতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক বা ডিসির নামে উক্ত জমির রেকর্ড থাকে। অতএব এক কথায় বলা যায় খাস জমির মালিক সরকার।

খাস জমির খতিয়ান নম্বর কত?

সকল মৌজার ১ নম্বর খতিয়ানে উক্ত মৌজার সকল খাস জমি অন্তর্ভুক্ত থাকে।

খাস জমি কেনার ও বিক্রির নিয়ম কি?

খাস জমি ক্রয় বা বিক্রয় করা যায় না কারন খাস জমির মালিক সরকার। খাস জমি ক্রয় বা বিক্রয় আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে খাস জমি উত্তরাধিকার সূত্রে সন্তানেরা ভোগ দখল করতে পারবেন।

শেষ কথা

এতক্ষণ আলোচনা করা হয়েছে খাস জমি কত প্রকার ও খাস জমি রেকর্ড করার নিয়ম সম্পর্কে। এ ছাড়াও এ বিষয় সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি সকলে খুব ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছেন। এ বিষয়ে কারো কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন, ধন্যবাদ।

Leave a Comment