এফিডেভিট কি,এভিডেভিড কি ও হলফনামা লেখার নিয়ম জানুন

এফিডেভিট কি বা এভিডেভিড কি ও হলফনামা লেখার নিয়ম কি তা এই আর্টিকেলে বস্তারিত আলোচনা করা হবে। 

আমরা আমাদের জীবনে চলার পথে বিভিন্ন প্রয়োজনে এফিডেভিট কি বা এভিডেভিড কি ও হলফনামা সম্পর্কে কম বেশি শুনেছি। 

কোন কারনে যদি আমাদের জন্ম নিবন্ধন সনদে নিজের নাম বা পিতা মাতার নাম ভুল হয় বা আমাদের স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়ে থাকে তাহলে এফিডেভিট বা হলফনামা করে তা সংশোধন করতে হয়। 

এই আর্টিকেলে আমরা জানব এফিডেভিট কি বা এভিডেভিড কি ও হলফনামা লেখার নিয়ম সম্পর্কে। 

আরও দেখুন- স্ট্যাম্প জমি বন্ধক নামা লেখার নিয়ম pdf বা জমি বন্ধক লেখার পদ্ধতি এবং  কিভাবে দলিল তল্লাশি অনলাইনে বা জমির দলিল অনুসন্ধান করবেন। 

এফিডেভিট কি বা এভিডেভিড কি? 

এভিডেভিড বা এফিডেভিট শব্দের আক্ষরিক অর্থে বা সাধারণ ভাবে বললে বলা যায় এটা একটি লিখিত জবানবন্ধি যা ২০০ টাকার স্ট্যাম্পে একজন বিজ্ঞ আইনজীবী দিয়ে লিখিয়ে তাতে ছবি সংযুক্ত করে এখতিয়ার সম্পন্ন কোন প্রথম শ্রেণীর বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট কতৃক স্বাক্ষরিত ডকুমেন্ট। 

যেকোন ভূল সংশোধন বা কোন প্রকার ঘোষনা যা একটি নিদিষ্ট ফরমে বা একজন বিজ্ঞ আইনজীবী দিয়ে লিখিয়ে তাতে ছবি সংযুক্ত করে আদালতের শুনানির মাধ্যমে উক্ত এফিডেভিটে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট মূল স্ট্যাম্পে রেজিস্ট্রি নম্বর বসিয়ে তাতে তাঁর স্বাক্ষর ও সীল সংযুক্ত করে এফিডেভিটটি আপনি এফিডেভিট আবেদন কারী বরাবরে প্রদান করবেন।  

এর পর আবেদন কারী উক্ত এফিডভিট টি সমস্থ জায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন। এই সকল প্রক্রিয়া কে এফিডেভিট বা এভিডেভিড বলে। 

হলফনামা কি এবং কেন?

একজন নাগরিকের পরিচয় বহন করে এমন কোন ডকুমেন্টের কোন ভূল যেমন নাম, পিতা মাতার নাম বা ঠিকানা পরিবর্তন বা সংশোধন করা প্রয়োজন হলে তা ২০০ টাকার স্ট্যাম্পে লিখে বা কোন বিজ্ঞ আইনজীবী কতৃক লিখে একজন বিজ্ঞ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট উপস্থাপন করতে হয়। 

বিজ্ঞ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সমস্থ  কাগজ পত্র দেখে সত্যতা যাচায় করে সিল ও স্বাক্ষর করবেন। এই স্বাক্ষরিত ডকুমেন্টস সকল সরকারি এবং বেসরকারি দপ্তরে গ্রহণযোগ্যতা পাবে। 

এই ডকুমেন্টস ই হলো হলফনামা যা যে কোন ধরনের ভুল বা ঘোষনা করার জন্য লিখিত ও আইনি প্রক্রিয়া। 

তবে ক্ষেত্র বিশেষ অনেক চাকরির সারকুলারে উল্লেখ থাকে বয়স যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এভিডেভিড গ্রহণযোগ্য নয়। সেক্ষেত্রে এভিডেভিড করে বয়স কমালে বা বাড়ালে উক্ত চাকুরিতে নিয়োগ পেতে সমস্যায় পড়তে হবে। 

এফিডেভিট করতে কি কি লাগে

  • এফিডেভিট করতে ২০০ টাকার একটি স্ট্যাম্প প্রয়োজোন। আপনার লিখিত বক্তব্য যদি বেশি হয় তাহলে ১০০ টাকার একটি ও ৫০ টাকার ২ টি স্ট্যাম্প নিতে পারেন।  
  • যে তথ্য সংশোধন করবেন তা প্রমানের জন্য যা যা প্রয়োজন তা নিতে হবে। 
  • অনেক সময় মালিকানা পরিবর্তনের জন্য এফিডেভিট করতে হয় সেক্ষেত্রে নতুন এবং পুরাতন মালিক উভয়ের উপস্থিতি এবং পরিচয় প্রদানের সকল ডকুমেন্ট প্রয়োজোন হয়। 
  • হলফকারীকে হলফনামার সঙ্গে পাসপোর্ট আকারের সত্যায়িত ছবি দিতে হবে এবং স্বাক্ষর করতে হবে 
  • উল্লেখ্য বিবাহ এবং বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক এর জন্য ৫০০ টাকার স্ট্যাম্প প্রয়োজন হবে। 
  • জমি জমা নিয়ে হলে হলফনামা প্রয়োজন হলে উক্ত জমির তফসিল উল্লেখ করতে হবে।  
  • হলফনামায় অবশ্যই যে তারিখে হলফ নামা টি সম্পাদন করা হচ্ছে, সেই তারিখ উল্লেখ্য করতে হবে।    

হলফনামা লেখার নিয়ম?

হলফনামা বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। এপর্যায়ে হলফনামা লেখার নিয়ম দেখাতে একটি বিবাহের হলফনামা লেখার নিয়ম দেখানো হলো। 

একটি বিয়ের হলফনামা

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বিজ্ঞ নোটারী পাবলিক

কার্যালয় যশোর।বিবাহের হলফনামা (কোর্ট ম্যারেজ) 

প্রথম পক্ষঃ মো সবুজ হোসেন, পিতাঃ মোঃ রইচ উদ্দিন , মাতাঃ মাসুমা বেগম, জন্ম তারিখ- ০২/১১/১৯৯৯ ইং, জাতীয় পরিচয় পত্র- ৫৯৫৪৮৭৪৮৯৮, ধর্ম : ইসলাম, পেশা: চাকুরী, জাতীয়তা: বাংলাদেশী, ঠিকানাঃ- গ্রামঃ নগর, পোঃ বিরামপুর, উপজেলাঃ  উজিলপুর, জেলাঃ যশোর। 

দ্বিতীয় পক্ষঃ মোছাঃ খদেজা আক্তার, পিতাঃশফিকুল ইসলাম, মাতাঃ রাবেয়া বেগম, জন্ম তারিখ- ০৭/০৩/২০০৫ ইং, জাতীয় পরিচয় পত্র- ৭৮৮৪৮৭৪৪৯৮, ধর্ম : ইসলাম, পেশা: ছাত্রী, জাতীয়তা: বাংলাদেশী, ঠিকানাঃ- গ্রামঃ পানিসারা, পোঃ  পানিসারা , উপজেলাঃমাগুরা সদর, জেলাঃ মাগুরা ।  

আমরা উভয় পক্ষ ধর্মত্ব প্রতিজ্ঞাপূর্বক অত্র হলফনামা দ্বারা ঘোষণা করিতেছি যে, আমরা জন্ম সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা ৷

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আইনের প্রতি যথেষ্ঠ শ্রদ্ধাশীলও আস্থা ভাজন৷ আমরা উভয় পক্ষ বর্তমানে প্রাপ্ত বয়স্ক অর্থাৎ সাবালক ও সাবালিকা ৷ আমরা নিজেদের ভালো মন্দ বুঝার যথেষ্ঠ জ্ঞান বুদ্ধি অর্জন করিয়াছি৷ 

আমরা নৈতিক গুনাবলি সম্পর্কে অবগত আছি ৷ আমরা উভয়ের নৈতিক গুনাবলি পর্যালোচনা করিয়া দীর্ঘ দিন কথা-বার্তা ও আচার ব্যবহারে একে অপরের প্রতি গভীরভাবে মুগ্ধ হইয়া ভালোবাসার পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হই ৷

তাই নিজেদের মঙ্গলার্থে উভয়ের ভালোবাসাকে স্থায়ী করণের লক্ষ্যে একে অপরকে বিবাহের প্রস্তাব করি, তাহাতে কারো কোন আপত্তি না থাকায় আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছি ৷ 

আমাদের এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে উভয়ে সম্মত হইয়া মুসলিম ইসলামিক শরীয়া মোতাবেক উভয় পক্ষের তিনজন স্বাক্ষীর উপস্থিতে স্থানীয় কাজীর মাধ্যমে ৪,০০,০০০/- (চার লক্ষ) টাকা দেন মোহর ধার্য করিয়া একে অপরকে স্বামী স্ত্রী হিসাবে  কবুল বলিয়া বিবাহ রেজিস্ট্রি করিয়াছি ৷ 

অদ্য মাননীয় নোটারী পাবলিক কার্যালয় কুমিল্লা বরাবরে অত্র বিবাহের হলফনামা সম্পাদন করিলাম ৷ আমরা অত্র হলফকারী অদ্য ০৪/০৮/২০২৪ইং তারিখ হইতে আইনগতভাবে পরস্পর স্বামী স্ত্রী হিসাবে পরিচিতি ও পরিগণিত হইলাম। এবং আজীবন ঘর সংসার করিব বলিয়া অঙ্গীকার করলাম।

আমরা পরস্পর শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখিয়া উভয়ের আদেশ, নিষেধ মানিয়া চলিব। আমাদের বিবাহ সম্পর্কে আমাদের কোন পক্ষের কোন আত্মীয় স্বজন কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বা করায় তাহলে তাহারা আইনত দণ্ডনীয় হইবে আমরা আরোও ঘোষণা করিতেছি যে, অদ্য হইতে আমরা স্বামী স্ত্রী হিসাবে পরিচিত হইয়া আজীবন একে অপরের সুখে দুঃখে চির সাথী হয়ে থাকিব।

সাক্ষীগণের নাম : 

উপরোক্ত বর্ণনা আমাদের জ্ঞান ও বিশ্বাস মতে সম্পূর্ণ সত্য জানিয়া আমরা অদ্য মাননীয় নোটারি পাবলিক কার্যালয়, যশোর  হাজির হইয়া অত্র হলফনামায় নিজ নিজ নাম সাক্ষর করিয়া সম্পাদন করিলাম । 

তাং —–———— 

হলফকারীগণের ¯স্বাক্ষরঃ

১।

২।

৩।

হলফকারীদ্বয় অত্র বিবাহের হলফনামায় তাহাদের নিজ নিজ নাম সাক্ষর করিলে আমি তাহাদের সনাক্ত করিলাম ।  

হলফকাররী কর্মকর্তার স্বাক্ষরঃ

হলফনামা অর্থ কি?

হলফনামা হলো লিখিত জবানবন্ধী যা ২০০ টাকার একটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত আকারে থাকে এবং একজন বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট অথবা নোটারি পাবলিক কতৃক স্বাক্ষরিত থাকে। 

এফিডেভিট করতে কত টাকা লাগে?

এফিডেভিট করতে ২০০ টাকার একটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প প্রয়োজন এবং উক্ত স্ট্যাম্প লেখার খরচ ও আইনজীবীর খরচ অথাবা নোটারি পাবলিকের খরচ আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারন করে নিতে হবে। 

এফিডেভিট করার খরচ কত? 

১। ২০০ টাকার একটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প
২। স্ট্যাম্প লেখার খরচ 
৩। নোটারি পাবলিক অথাবা আইনজীবীর খরচ আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারন করে নিতে হবে। 

এফিডেভিট মানে কি?

এফিডেভিট মানে হলো কোন ব্যক্তির লিখিত জবানবন্ধী বা বক্তব্য যা ২০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত আকারে প্রদান করে একজন বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট অথবা নোটারি পাবলিক কতৃক স্বাক্ষর করতে হয়। 

শেষ কথা  

এতক্ষন আলোচনা করা হয়েছে এফিডেভিট কি বা এভিডেভিড কি ও হলফনামা লেখার নিয়ম সম্পর্কে। এছাড়া হলফনামা অর্থ কি এবং এফিডেভিট করতে কি কি লাগে তাও আলোচনা করা হয়েছে। 

এখানে একটি বিবাহের হলফনামার নমুনা দেওয়া হয়েছে। মনে রাখবেন এটা শুধু মাত্র একটি নমুনা। বিবাহের ক্ষেত্রে অবশ্যই কাজীর শরণাপন্ন হতে হবে। 

Leave a Comment