ইসলামে মায়ের সম্পত্তিতে ছেলে মেয়ের অধিকার দেওয়া হয়েছে। আমরা জানি ইসলাম মহান আল্লাহর মনোনীত এক মাত্র ধর্ম।
আমরা আরও জানি এখানে মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নিয়ম নীতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
জমি জায়গা বা টাকা পয়সা আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আমরা আমাদের জীবনে যে অর্থ সম্পদ অর্জন করি তার বেশিরভাগই আমাদের উত্তরাধিকার বা ছেলে মেয়ে ভোগ করে থাকে।
আমাদের জমি জায়গা বা অর্থ সম্পদ ভাগ বন্ঠন করার ক্ষেত্রে একটি সুনিদিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করতে হয়।
এই নীতিমালা বা উত্তরাধিকার বন্ঠন আইন এক এক দেশে বা ধর্মে এক এক রকম ভাবে পরিচালিত হয়।
আমরা জানি বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ তাই এ দেশে উত্তরাধিকার আইন কোরআন সুন্নাহর আলোকে পরিচালিত হয়।
আমরা অনেকেই জানি বাবার সম্পত্তিতে ছেলে মেয়ে যথাক্রমে ২ঃ১ হারে সম্পত্তির ভাগ পেয়ে থাকে।
তবে মায়ের সম্পত্তিতে ছেলে মেয়ে কি পরিমান সম্পত্তির ভাগ পাবে তা অনেকেই জানতে চায়।
এই আর্টিকেলে আমরা জানব ইসলামে মায়ের সম্পত্তিতে ছেলে মেয়ে উভয়ের কি পরিমান অধিকার রয়েছে বা ইসলামে মায়ের সম্পত্তিতে ছেলে মেয়ের অধিকার সম্পর্কে।
ইসলামে মায়ের সম্পত্তিতে ছেলে মেয়ের অধিকার
ইসলামে মায়ের সম্পত্তিতে ছেলে মেয়ের একটি নিদিষ্ট অধিকার রয়েছে। আমাদের সমাজে অনেকে মনে করে মায়ের সম্পত্তিতে ছেলেদের থেকে মেয়েদের অধিকার বেশি।
প্রকৃতপক্ষে মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুয়ায়ী কোন ব্যক্তি যখন মারা যায় তখন তার উত্তরাধিকার সৃষ্টি হয়।
এক্ষেত্রে পিতা বা মাতা উভয়ের ক্ষেত্রে তাদের ছেলে বা মেয়ের মধ্যে সম্পদের বণ্ঠনের নিয়ম একই হবে।
কোন স্ত্রী যদি মারা যায় তার যদি কোন সন্তান না থাকে তাহলে তার সম্পত্তিতে স্বামীর অংশ থাকবে ১/২ বা অর্ধেক।
আর যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান থাকে তাহলে স্বামী পাবে ১/৪ ভাগ বা চার ভাগের এক ভাগ।
স্বামীর ভাগের অংশ দেওয়ার পর সন্তান গন ছেলেঃমেয়ে যথাক্রমে ২ঃ১ হারে বাকি সম্পত্তির ভাগ করতে হবে।
জীবিত মায়ের সম্পত্তি ভাগের নিয়ম
মায়ের সম্পত্তি বন্টন আইন বাংলাদেশ বা জীবিত মায়ের সম্পত্তি ভাগের নিয়ম সম্পর্কে এখানে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ হওয়ায় আমাদের দেশে মুসলমানদের মধ্যে উত্তরাধিকার বা ফারায়েজ বন্ঠণ কারা হয় মুসলিম ফারায়েজ আইন অনুযায়ী।
১। মৃত ব্যক্তির স্বামী জীবিত থাকলে স্ত্রীর সম্পত্তির ৪ ভাগের ১ ভাগ স্বামী পাবে।
২। মৃত ব্যক্তির এক ছেলে এবং এক মেয়ে থাকলে স্বামীর ভাগের পরে বাকি সম্পত্তির তিন ভাগের মধ্যে ছেলে পাবে ২ ভাগ এবং মেয়ে পাবে এক ভাগ।
৩। মৃত ব্যক্তির যদি স্বামী ও ১ ছেলে এবং ৩ মেয়ে থাকে তাহলে স্বামী পাবে ৪ ভাগের এক ভাগ সম্পত্তি।
বাকি সম্পত্তির ৫ ভাগের ২ ভাগ পাবে ছেলে এবং বাকি ৩ ভাগ পাবে ৩ মেয়ে। যেমন মোট জমি ১০০ শতাংশ হলে স্বামী ২৫%, ছেলে পাবে ৩০% এবং প্রত্যেক মেয়ে পাবে ১৫%।
মুসলিম আইনে মায়ের সম্পত্তি বন্টন করার নিয়ম
মুসলিম আইনে মায়ের সম্পত্তি বন্টন নিয়ম এবং বাবার সম্পত্তি বন্ঠনের নিয়ম একই। মুসলিম আইনে মায়ের সম্পত্তি বন্টন করতে হবে ছেলে ২ ভাগ এবং মেয়ে ১ ভাগ।
মৃত ব্যক্তির স্বামী বেচে থাকলে তার স্বামী পাবে মোট সম্পত্তির ৪ ভাগের এক ভাগ। বাকি সম্পত্তি থেকে ছেলে মেয়ের মধ্যে ভাগ করতে হবে।
মুসলিম অইনে মা মারা গেলে সম্পত্তির ওয়ারিশ হবে কে?
মুসলিম আইনে মা মারা গেলে সম্পত্তির ওয়ারিশ হবে তার স্বামী এবং সন্তানেরা। তবে যদি তার স্বামি মারা যায় সেক্ষেত্রে সম্পত্তির ওয়ারিশ হবে সন্তানগন।
মুসলিম ফারায়েজ আইন অনুযায়ী ওয়ারিশ কি,কারা ওয়ারিশ হিসাবে গন্য হবে এবং ওয়ারিশ সম্পত্তির বন্ঠন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন বা ওয়ারিশ জমি বন্টন সম্পর্কে জানুন এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
মায়ের সম্পত্তি ছেলে মেয়ে কতটুকু পাবে?
মায়ের সম্পত্তি ছেলে মেয়ে কতটুকু পাবে তা এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
যদি মায়ের ছেলে ও মেয়ে উভয়ই থাকে।
- ছেলে সন্তান পাবে ২ অংশ ।
- মেয়ে সন্তান পাবে ১ অংশ।
- অর্থাৎ, ছেলের সম্পত্তি মেয়ের সম্পত্তির দ্বিগুণ হবে (২ঃ১ )।
যদি মায়ের শুধুমাত্র মেয়ে সন্তান থাকে।
- যদি একজন মেয়ে থাকে, সে মোট সম্পত্তির অর্ধেক পাবে।
- যদি দুই বা তার বেশি মেয়ে থাকে, তারা একসাথে মোট সম্পত্তির ২/৩ (দুই-তৃতীয়াংশ) পাবে।
- বাকি অংশ মায়ের অন্যান্য ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টিত হবে (যেমন, স্বামী, ভাই-বোন, ইত্যাদি)।
যদি মায়ের কোনো সন্তান বেচে না থাকে।
যদি মায়ের কোনো সন্তান বেচে না থাকে তাহলে সম্পত্তি অন্যান্য ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টন হবে, যেমন স্বামী, ভাই-বোন, ইত্যাদি, শরিয়ত অনুযায়ী নির্ধারিত অংশ অনুযায়ী।
ইসলামে মায়ের সম্পত্তি ভাগের নিয়ম
ইসলামে মায়ের সম্পত্তি ভাগের নিয়ম বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
মা মারা যাওয়ার পরে তার উত্তরাধিকারী থাকলে।
মা মারা যাওয়ার পরে তা উত্তরাধিকারগনের মধ্যে নিম্মলিখিত ভাবে জমি বন্ঠন করা হবে।
- সন্তান থাকলে স্বামী ১/৪ ভাগ পাবে এবং সন্তান না থাকলে স্বামী ১/২ ভাগ পাবে। ছেলে ও মেয়ের মধ্যে উত্তরাধিকার বণ্টনের হার হলো ২ঃ১
পিতা-মাতা (যদি জীবিত থাকে)
- যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকে, তবে তার মা ১/৬ অংশ পাবে।
- যদি সন্তান না থাকে, তবে মা ১/৩ অংশ পাবে।
শুধুমাত্র কন্যা সন্তান থাকলে
- একমাত্র কন্যা থাকলে ১/২ অংশ পাবে।
- একের অধিক কন্যা থাকলে সকলে মিলে ২/৩ অংশ পাবে।
- বাকি অংশ অন্যান্য উত্তরাধিকারীদের মধ্যে শরীয়ত অনুযায়ী বণ্টন হবে।
মৃত ব্যক্তির সন্তান ও স্বামী উভয়েই থাকলে
- স্বামী ১/৪ পাবে।
- অবশিষ্ট অংশ সন্তানদের( ছেলে ও মেয়ে যথাক্রমে ২ঃ১ হারে) মধ্যে বণ্টন হবে।
মৃত ব্যক্তির সন্তান, স্বামী ও মা উভয়েই জীবিত থাকলে
- মৃত ব্যক্তির স্বামী ১/৪ পাবে।
- মৃত ব্যক্তির মা ১/৬ পাবে।
- অবশিষ্ট অংশ সন্তানদের মধ্যে বণ্টন হবে ( ছেলে ও মেয়ে যথাক্রমে ২ঃ১ হারে)
যদি মা মারা যান এবং পুত্র সন্তান না থাকে, শুধু ভাই-বোন থাকে
- যদি এক ভাই বা বোন থাকে, সে ১/৬ অংশ পাবে।
- যদি একাধিক ভাই-বোন থাকে, তারা একসঙ্গে ১/৩ অংশ পাবে।
মাতার সম্পত্তিতে কন্যার অধিকার কম না বেশি?
অনেকে মনে করে মাতার সম্পত্তিতে কন্যার অধিকার বেশি। যেহেতু মা একজন মেয়ে তাই অনেকের এরকম ধারনা হয়ে থাকে।
মুসলিম ফারায়েজ আইন বা মুসলিম উত্তরাধিকার বন্ঠন আইন অনু্যায়ী পিতা মাতার সম্পত্তিতে ছেলে এবং মেয়ের অধিকার যথাক্রমে ২ এবং ১ ভাগ।
সুতরং যারা মনে করে মাতার সম্পত্তিতে মেয়ের বা কন্যার অধিকার বেশি তাদের ধারনা ভুল।
কোন সন্তান না থাকলে সম্পত্তির বন্টন কিভাবে করবেন?
কোন দম্পত্তির সন্তান না থাকলে তাদের উভয়ের নিকট আত্নীয় দের মধ্যে তাদের সম্পত্তি ভাগ হবে। এখানে নিকট আত্নীয় বলতে ধর্মীয় নিতীমালা অনুযায়ী নির্ধারন করতে হবে।
শেষ কথা
এতক্ষন আলোচনা করা হয়েছে ইসলামে মায়ের সম্পত্তিতে ছেলে মেয়ের অধিকার সম্পর্কে। এছাড়াও এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে জীবিত মায়ের সম্পত্তি ভাগের নিয়ম বা মায়ের সম্পত্তি বন্টন আইন বাংলাদেশ সম্পর্কে।
জমি জায়গা বা অর্থ সম্পদের ভাগ বন্ঠন আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যাতে কারও কোন হক বা অধিকার লঙ্ঘন না হয়।
যদি কোন পিতা মাতা তাদের সন্তানদের মধ্যে হক প্রতিষ্ঠা না করে তাহলে পরকালে তাদের কে মহান আল্লাহর নিকট জবাবদীহিতা করতে হবে।
এজন্য আমাদের প্রত্যেক পিতা মাতার এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।