অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই বাংলাদেশ ও কত বছর পর পর হয়।

অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই বাংলাদেশ জমির রেকর্ড কত বছর পর পর হয় তা আমাদের জানাটা প্রয়োজন। জমি-জায়গা আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।

আর এই সম্পত্তির সঠিক রক্ষনাবেক্ষন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই জমি জায়গা সম্পর্কে বেসিক কিছু বিষয়ে অবগত থাকা আবশ্যক।  

জমি জায়গার বেসিক বিষয়ের মধ্যে যে গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে অন্যতম হলো জমির রেকর্ড।

জমির রেকর্ড এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে জমি ক্রয়, বিক্রয়,উত্তরাধিকারদের মধ্যে বন্ঠন এক কথায় জমি জায়গা সংক্রান্ত সকল ক্ষেত্রে এটি প্রয়োজন হয়। 

আগে জমির রেকর্ড সম্পর্কে জানতে বা এ সংক্রান্ত সকল কাজ ভূমি অফিসে গিয়ে করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে জমি জায়গা সংক্রান্ত প্রায় সকল সুবিধা অনলাইন এর মাধ্যমে প্রদান করা হয়ে থাকে।  

নিসন্দেহে এটি গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।  

এছাড়া আপনি যদি আপনার জমির মৌজা ম্যাপ সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের মৌজা ম্যাপ download বা জমির নকশা pdf যেভাবে পাবেন এই আর্টিকেল টি পড়তে পারেন ।

বন্ধরা আজ আমি আমার এই আর্টিকেলে অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই বাংলাদেশ বা জমির রেকর্ড কত বছর পর পর হয় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। 

জমির রেকর্ড কাকে বলে?

একটি দেশের যত জমি থাকে তার একটি পরিসংখ্যান সে দেশের সরকারের  কাছে থাকে।

যেমন কোন প্রতিষ্ঠান কোন পন্য উৎপাদন করেন তখন তার পরিচিতি ও হিসাব সংরক্ষনের জন্য ব্রান্ড এর নাম , মডেল নম্বর , রং ইত্যাদি সম্বলিত তথ্য সংরক্ষণ করে থাকেন ।  

ঠিক তেমনি একটি দেশ তার সকল জমির হিসাব সংরক্ষনের জন্য বিভিন্ন সময়ে জমির উপরে জরিপ পরিচালনা করে ।

এই জরিপে প্রতি টি জমির সকল তথ্য যেমন জমির অবস্থান অনুযায়ী জেলা ,উপজেলা ,  ইউনিউন , গ্রাম বা মৌজা  , দাগ নম্বর , মালিকের নাম , জমির ধরন , জমির শ্রেনী , জমির চৈহদ্দি ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করা হয় । 

একটি জমির গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাগজ পত্র থাকে যেমন দলিল , খতিয়ান, পর্চা । খতিয়ান আবার দুই প্রকার যেমন নামজারি বা নামপত্তন খতিয়ান ও সার্ভে বা জরিপ খতিয়ান ।  

সরকার জরিপ পরিচালনা করে যে খতিয়ান প্রস্তুত করে তাকেই জমির রেকর্ড খতিয়ান বা জরিপ খতিয়ান বলে ।

জমির রেকর্ড কিভাবে দেখবেন জানুন।

ইতিপূর্বে আপনি যদি আপনার জমির রেকর্ড যাচায় করতে চাইতেন তাহলে আপনাকে ভূমি অফিসে গিয়ে করতে হত ।

এতে আপনার সময় ও অর্থ দুটোই ব্যয় হত। অনেক সময় আপনি হয়তো অনেক হয়রানির শিকার হতেন ।  

কিন্তু বর্তমানে ভূমি অফিসে না গিয়ে আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে আপনি নিজে অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই করতে পারবেন ।

জমির রেকর্ড যাচায় বাংলাদেশ সরকার এতটা সহজ করেছে যা নিশ্চই প্রশংশার দাবিদার । 

এখন আপনি কিভাবে জমির রেকর্ড যাচাই বাংলাদেশ বা জমির রেকর্ড কিভাবে দেখব সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো । 

প্রথমে আপনি আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ করে এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন ।

ক্লিক করার পর আপনি নিচের ছবির মত একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন ।  

জমির রেকর্ড যাচাই

হোম পেজে যে অপশন গুলো দেখতে পাবেন তার মধ্যে সার্বে খতিয়ান অপশনে ক্লিক করুন । ক্লিক করার পরে আপনি সার্বে খতিয়ান অনুসন্ধান নামে একটি ফরম দেখতে পাবেন । এই ফরম এ যে সকল তথ্য  চাওয়া হয়েছে তা হলো  

অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই

১। বিভাগ ( এখানে আপনার জমির অবস্থানের বিভাগ নির্বাচন করুন } 

২। জেলা (এখানে আপনার জমির অবস্থানের  জেলা  নির্বাচন করুন } 

৩। উপজেলা ( এখানে আপনার জমির অবস্থানের উপজেলা  নির্বাচন করুন } 

৪। খতিয়ানের ধরন ( এখানে আপনি কি ধরনের খতিয়ান অনুসন্ধান করতে চাচ্ছেন তা নির্বাচন করুন যেমন  বিআরএস, আর এস, সিএস, দিয়ারা ইত্যাদি} 

৫ । মৌজা ( এখানে আপনার জমির অবস্থানের মৌজার নাম  নির্বাচন করুন } 

৬। মৌজা নির্বাচন করার পরে আপনি  খতিয়ান এর তালিকা কলামে উক্ত মৌজার যত জমি আছে তার মালিকের নাম সহ খতিয়ান নম্বর দেখতে পাবেন ।  

এরপর আপনি আপনার নিদিষ্ট খতিয়ান টি খুজে বের করুন । খতিয়ান টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে উক্ত খতিয়ানের উপরে ডাবল ক্লিক করুন । 

অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই বাংলাদেশ

 ডাবল ক্লিক করার পর আপনি এমন একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন । 

জমির রেকর্ড কত বছর পর পর হয়

উপরের পেজে যে দাগ নম্বর দেখতে পাবেন তার আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে আপনাকে বিস্তারিত বাটনে ক্লিক করুন । ক্লিক করার পরে নিচের ছবির মত ইন্টারফেস দেখতে পাবেন । 

জমির রেকর্ড কিভাবে দেখব

এখানে আপনি উক্ত দাগ নম্বরের জমির মালিকের নাম ,গ্রাম ইত্যাদি দেখতে পাবেন।  

অনলাইনে জমির রেকর্ড বের করার নিয়ম জানুন

 আপনি যদি অনলাইনের মাধ্যমে আপনার জমির রেকর্ড বা সার্ভে খতিয়ানের সার্টিফাইড বা হার্ড কপি পেতে চান তাহলে আপনাকে এর জন্য আবেদন করতে হবে ।  

আবেদন করার জন্য উপরের ছবির খতিয়ান আবেদন  বাটনে ক্লিক করুন । তাহলে নিচের ছবির মত একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন । 

অনলাইনে জমির রেকর্ড বের করার নিয়ম

খতিয়ান আবেদম ফর্ম এ আপনি আপনার  জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর  , জন্ম তারিখ এবং মোবাইল নাম্বর দিয়ে যাচায় করুন  বাটন টি তে ক্লিক করুন।

ক্লিক করার পরে আপনি দেখতে পাবেন আপনার নাম ও ঠিকানা অটোমেটিক পুরুন হয়ে যাবে । 

আবেদনের ধরন  অপশন টি তে আপনি অনলাইন এ খতিয়ান ডাওনলোড করতে পারবেন । এ জন্য আপনাকে অনলাইন বাটনে ক্লিক করতে হবে ।

আর যদি সার্টফাইড কপি বা হার্ড কপি পেতে চান তা হলে আপনাকে সার্টিফাইড কপি  বাটনে ক্লিক করতে হবে । 

জমির রেকর্ড দেখতে ফি পরিশোধ করবেন যেভাবে।

অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই বা অনলাইনে জমির রেকর্ড ডাউনলোড করতে হলে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পরিশোধ করতে হবে। 

এই টাকা পরিশোধ এর জন্য আবেদন ফরম এর নিচের দিকে কয়েকটি প্রেমেন্ট গেট ওয়ে এর অপশন দেখতে পাবেন। আপনি যেকোনো একটি মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন। 

ধরে নিলাম আপনি প্রেমেন্ট এর মাধ্যম হিসেবে বিকাশ নির্ধারণ করেছেন। বিকাশ এর লোগো তে ক্লিক করার সাথে আপনি বিকাশের পেমেন্ট গেট ওয়েতে প্রবেশ করবেন।

সেখানে আপনার বিকাশ মোবাইল নাম্বার দিয়ে কনফার্ম বাটনে ক্লিক করলে আপনার মোবাইল নম্বরে একটি otp মেসেজ প্রবেশ করবে। 

এরপর আপনি ওটিপি ভেরিফিকেশন এর মাধ্যমে পেমেন্টটি সম্পন্ন করবেন। 

ইতিপূর্বে আপনি যদি আবেদনের ধরন অপশনে অনলাইন নির্ধারণ করে থাকেন তাহলে পেমেন্ট করার সাথে সাথে আপনি অনলাইন কপি পেয়ে যাবেন। 

এক্ষেত্রে আপনি অনলাইন কমিটি সাথে সাথে প্রিন্ট করে নিবেন না হলে হারিয়ে যেতে পারে। 

আর যদি আবেদনের ধরন অপশনে সার্টিফাইড কপি নির্ধারণ করে থাকেন তাহলে প্রেমেন্ট করার পরে আপনার ঠিকানায় ডাক যোগে রেকর্ড এর সার্টিফাইড কপি পৌঁছানো হবে। সেক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২৫ দিন সময় লাগতে পারে। 

জমির রেকর্ড সংশোধন কিভাবে করা যায় জানুন  

বন্ধুরা এমন অনেক সময় দেখা যায় যে জমির প্রকৃত মালিক যে তার কাছে জমির দলিল রয়েছে কিন্তু রেকর্ড খতিয়ান বা সার্ভিস খতিয়ানে জমির প্রকৃত মালিক এর নাম নেই বা রেকর্ড হয়েছে অন্য কারো নামে।

এমন হবে না যে যার নামে জমি রেকর্ড করা হয়েছে সে জমির মালিক হয়ে গেছে বা যার নাম জমির রেকর্ড থেকে বাদ পড়েছে সে মালিকানা হারিয়ে ফেলেছে। 

এই ধরনের সমস্যা হওয়ার পিছনে কিছু কারণ থাকে। কখনো এমন হয় যে জমির প্রকৃত মালিক দূরে থাকে কিন্তু তার জমি অন্য কেউ চাষাবাদ করে।

এরকম পরিস্থিতিতে যখন মৌজাভিত্তিক জরিপ কার্য পরিচালনা হয়ে থাকে তখন দেখা যায় যে জমি টি চাষাবাদ করছে সে জমির প্রকৃত মালিকের নামে  জমির রেকর্ড না করে নিজের নামে জমির রেকর্ড করে নেয়। 

আবার এমনও হয় সার্ভেয়ার কর্তৃক করণিক ভুল এর কারণে একজনের জমি আরেক জনের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। 

সার্ভেকারকরা জমি সার্ভে করার পরে একটি মাঠ পর্চা আপনাকে দিয়ে যায়। আপনি মাঠপর সাথে দেখলেন আপনার জমির দাগ নম্বর অথবা পরিমাপে বা আপনার নামের বানানে অথবা পুরো জমি টি অন্য কারো নামে রেকর্ড হয়ে গেছে।

সেক্ষেত্রে আপনি ৩০ দিন এর মধ্যে সেটেলমেন্ট অফিসে আবেদন করলে রেকর্ড সংশোধন করতে পারবেন। 

 আর যদি আপনি সে সুযোগ টি হারিয়ে ফেলেন ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দিতে হবে। আর যদি আপনার ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালে মামলা দেওয়ার সময় পার হয়ে যায় তাহলে সরাসরি একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে সকল কাগজপত্র দিয়ে দেওয়ানি আদালতে সত্বের মামলা দিতে হবে। 

জমির রেকর্ড সংশোধন জন্য কি কি কাগজপত্র লাগবে ?  

১। আপনি যদি ক্রয় সূত্রে জমির মালিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জমির দলিল এবং যার কাছ থেকে জমিটি ক্রয় করেছেন তার দলিল বায়া দলিল লাগবে। 

২। যদি আপনার কাছে দলিল না থাকে শুধুমাত্র খতিয়ান বলে জমির মালিক হয়ে থাকেন তাহলে সি এস খতিয়ান থেকে শুরু করে পরবর্তী সকল খতিয়ান আপনার কাছে থাকতে হবে। সাথে অবশ্যই ভুল রেকর্ডটি প্রয়োজন হবে। 

৩। আপনার এন আইডি কার্ডের ফটোকপি প্রয়োজন হবে। 

৪। হালসাল নাগাদ পর্যন্ত আপনার জমির যত খাজনা দিয়েছেন তার রশিদ প্রয়োজন হবে। 

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে ছোটখাটো ভুল ত্রুটি যেমন করণিক দ্বারা নামের বানানে ভুল হয় সেক্ষেত্রে এসিল্যান্ড বরাবর আবেদন করলে সহকারি ভূমি কমিশনার কর্তৃক ছোটখাটো সংশোধন করা যাবে 

জমির রেকর্ড কী ?

 
কোন জমির মালিকানা, পরিমাণ, জমির প্রকৃতি,ধরন ইত্যাদি ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নথিভুক্ত করার পর উক্ত জমির মালিক কে যে প্রমানপত্র প্রদান করা হয় তাই জমির রেকর্ড।  

জমির রেকর্ড কাকে বলে ?  

 
জমির রেকর্ড কে এক কথায় মালিকানা প্রমান পত্র বলা যেতে পারে। এই জমির রেকর্ড ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নথিভুক্ত করা হয়। 

জমির রেকর্ড যাচাই app আছে কি ?

 
আপনার এন্ড্রয়েড মোবাইলে গুগুল প্লে ষ্টোরে জমির রেকর্ড যাচাই অ্যাপ লিখে সার্স দিলে বেশ কিছু এ্যাপ পাবেন। 
এখান থেকে যে কোন একটি এ্যাপ ব্যবহার করে জমির রেকর্ড যাচায় সহ সকল সেবা পাওয়া যাবে যাবে। 

জমির রেকর্ড কিভাবে করব ?

 
আপনি বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে জমির রেকর্ড বের করতে পারবেন। এছাড়া সরাসরি স্থানীয় ভূমি অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।  
 

জমির রেকর্ড কত বছর পর পর হয় ?

বাংলাদেশে সাধারণত ৩০ বছর পর পর জমির রেকর্ড করা হয় । আর তা ছাড়া জমির মালিক পরিবর্তন হলে নতুন মালিকের নামে জমির রেকর্ড করা আবশ্যক ।

শেষ কথা 

বন্ধুরা এতক্ষণ আপনাদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে কিভাবে অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই বাংলাদেশ বা জমির রেকর্ড কত বছর পর পর হয় সে সম্পর্কে।

আপনারা নিশ্চয়ই জানেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে অনেক সুযোগ-সুবিধা অনলাইনের মাধ্যমে প্রদান করছেন। 

তারই ধারাবাহিকতায়  ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনেক সুযোগ-সুবিধার মধ্যে একটি অন্যতম সেবা জমির রেকর্ড যাচাই। যা বর্তমানে আপনি চাইলে অনলাইনে সম্পূর্ণ করতে পারেন। 

বন্ধুরা আমার এই আলোচনার মধ্যে যদি কোন প্রকার ভুল ত্রুটি নজরে আসে তাহলে আপনারা অবশ্যই আমাকে কমেন্টস এর মাধ্যমে জানাবেন।

আপনি যদি কমেন্টস করে আমার ভুল ত্রুটি দেখিয়ে দেন তাহলে আমি সহ অন্যান্য পাঠক বন্ধুরা উপকৃত হব ,ধন্যবাদ। 

Leave a Comment